ভোটার আইডি কার্ড, NID কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র যাই বলিনা কেন, এটি নাগরিক জীবনে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি যখন কোন কারনে হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তখন কিভাবে আবার পাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হারানো আইডি কার্ড বের করার নিয়ম। চলুন জেনে নেই, হারানো আইডি কার্ড বের করার নিয়ম।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID কার্ড ছাড়া এখন সরকারী-বেসরকারী কোন সেবা পাওয়া দায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই কার্ডটি অত্যাধিক যত্ন সহকরে রাখতে হয়। এরপরেও অনেকের অসতর্কতা বা বেখেয়ালীর কারনে এটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়। হারনো আইডি কার্ড কিভেব পাওয়া যাবে বা কিভাবে পূনরায় বের করা যাবে তা নিয়ে আজকের এই আলোচনা।
হারানো আইডি কার্ড বের করার নিয়ম।
বর্তমানে হারানো আইডি কার্ড বের করা একেবারেই সহজ। আপনার NID বা ভোটার আইডি কার্ড যদি কোন কারনে হারিয়ে যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই বের বা ডাউনলোড করতে পারবেন। আর আপনি যদি আপনার হারানো আইডি কার্ড পূনরায় বের করতে চান তাহলে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
বর্তমানে হারানো আইডি কার্ড দুই ভাবে বের বা উত্তোলন করা যায়। অর্থাৎ যদি কারো ভোটার আইডি বা NID অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যায় তখন সেই আইডি কার্ড পূণরায় রি-ঈস্যু বা উত্তোলন করা যাবে দুই ভাবে। যথা-
- অনলাইনের মাধ্যমে।
- অপলাইনের মাধ্যমে।
উপরোক্ত দুইভাবে আমরা আমদের ভোটার আইডি কার্ড বা NID কার্ড পূনরায় রি-ইস্যু, বা উত্তোলন করতে পারবো। চলুন আজ আমরা জানবো কিভাবে অনলাইনে ঘরে বসে নিজে নিজে হারানো আইডি কার্ড বের করা যায়।
আইডি কার্ড হারানো বা নষ্ট হয়ে গেলে করনীয়।
ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয়পরিচয়পত্র হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে প্রথম যে কাজটি করতে হবে, তাহলো নিকটবর্তী থানায় একটি জেনারেল ডায়রি বা জিডি করা। কেননা জেনারেল ডায়রি বা জিডি করা ছাড়া অনলাইন বা অপলাইন কোন ভাবেই হারানো আইডি কার্ড বের করতে পারবেননা। কাছাকাছি থানায় জিডি করার সময় জিডির কপিতে থানার সিল সহ গ্রহণকারী কর্মকর্তার নাম, সিল ও পদবী উল্লেখ করতে হবে।
আরো জানতে ক্লিক করুনঃ
অনলাইনে হারানো আইডি কার্ড বের করার নিয়ম।
অনলাইনে হারানো আইডি কার্ড বের করতে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করতে হবে। নিম্মে ধাপগূলো আলোচনা করা হলো-
প্রথম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ।
আপনি অনলাইনে হারানো আইডি কার্ড বের করতে হলে সর্বপ্রথম https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। এখানে প্রবেশ করার পর নিম্মের পেইজটি ওপেন হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন।
বাংলাদেশে অনলাইনে NID কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের যে কোন সেবা নিতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট তথা https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ঠিকানায় প্রবেশ করে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন করে নিলে সেই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যে কোন সেবা নেওয়া যাবে।
- একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে প্রথমে এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ঠিকানায় প্রবেশ করে রেজিষ্ট্রার করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার ফরম নম্বর বসিয়ে জন্ম তারিখ বসাতে হবে। সবশেষে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করে পরবর্তী পেইজে যেতে হবে।
- তৃতীয় পেইজে যিনি নিবন্ধন করছেন তার আইডি কার্ড অনুযায়ী স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা বসাতে হবে। ঠিকানার ক্ষেত্রে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা সিলেক্ট করলেই হবে। তার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে যাতে হবে।
- চতুর্থ পর্যায়ে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত স্থানে মোবাইল নম্বর বসিয়ে একটি OTP পাঠাতে বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর মোবাইলে OTP গেলে সেটা পরবর্তী পেইজে বসিয়ে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
- পঞ্চম পর্যায় NID Wallet ডাউনলোড করে একটি QR কোড স্ক্যান করতে হবে।
- QR কোড স্ক্যান করার পর ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে।
- ফেইস ভেরিফিকেশন করার পর NIDW ওয়েবসাইট থেকে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।
- NIDW ওয়েবসাইট থেকে একটি পাসওয়ার্ড সেট করার মাধ্যমে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হবে এবং সাথে সাথে আপনাকে প্রফাইলে নিয়ে যাওয়া হবে।
একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।
তৃতীয় ধাপঃ আইডি কার্ড রি-ইস্যুর আবেদন।
হারানো আইডি কার্ড পূণরায় পেতে হলে রি-ইস্যুর আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে আপনি যখন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করেছেন তখন পাসওয়ার্ড সেট আপ করার সাথে সাথেই প্রফাইলে নিয়ে যাওয়া হবে। আর যদি পূর্বে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা থাকে তাহলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে হবে।
লগইন করলেই আপনাকে প্রফাইলে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রফাইলে গেলেই আপনি নিম্মের পেইজটিতে কয়েকটি অপশনের মধ্যে রি-ইস্যুর অপশনটিও দেখতে পাবেন।
এই পেইজে রি-ইস্যু অপশনে ক্লিক করার সাথে সাথেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে নিম্মের পেইজে।
চতুর্থ ধাপঃ রি-ইস্যুর জন্য তথ্য প্রদান।
উপরের পেইজের ডান দিকের উপরে এডিট অপশনটি দেখা যাচ্ছে। প্রথমে ঐ এডিট অপশনে ক্লিক করতে হবে। এডিট অপশনে ক্লিক করার পর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে নিম্মের পেইজে।
এই পেইজে ছয়টি অপশন রয়েছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে পূরণ করতে হবে। যথা-
- পুনর্মুদ্রণের কারন। অর্থাৎ কি কারনে আপনি আইডি কার্ডের রিইস্যুর আবেদন করেছেন, সেটা উল্লেখ করতে হবে। যেমন- হারিয়ে গেছে।
- জিডির নম্বর উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ আইডি কার্ড হারানোর সাথে সাথে যে জিডি করেছিলেন সেটির নম্বর উল্লেখ করুন।
- থানার নাম উল্লেখ করূন। অর্থাৎ যে থানায় জিডি করেছেন সেই থানার নাম উল্লেখ করতে হবে।
- পুলিশ অফিসারের নাম। যে পুলিশ অফিসার আপনার জিডি গ্রহন করেছেন তার নাম উল্লেখ করতে হবে।
- জিডি গ্রহণকারী পুলিশ অফিসারের পদবী উল্লেখ করতে হবে।
- জিডির তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
জিডির কপির তথ্য অনুযায়ী উপরোক্ত তথ্যগুলো যথাযথভাবে পূরণ করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে পরবর্তী পেইজে।
পঞ্চম ধাপঃ রিইস্যুর ফি জমাদান।
জিডির তথ্য পূরণের পর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে ফি জমাদান পেইজে। আপনি যেহেতু আইডি কার্ড রিইস্যু করতে চান সেহেতু রি-ইস্যু ফি জমা দিতে হবে। তাই জিডির তথ্য প্রদান পেইজের পর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে নিম্মের পেইজে।
এই পেইজে প্রথমে আবেদনের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর বিতরনের ধরন উল্লেখ করলেই টাকার পরিমান দেখা যাবে।
ফি জমা দিতে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ কিংবা রকেট সহ অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন Wallet এর মাধ্যমে এনআইডি নাম্বার দিয়ে টাকা ডিপোজিট করা যাবে। ফি জমা দিতে নিম্মোক্ত নির্দেশনা পড়ুন।
Nidw অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে। পেমেন্ট করার সময় অবশ্যই Duplicate Regular/argent বাছাই করে নিতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপঃ জিডির কপি আপলোড।
আইডি কার্ড রি-ইস্যুর এই পর্যায়ে আপনাকে জিডির কপি আপলোড করতে হবে। আপলোড করতে ফি জমা দানের পর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করলে নিম্মের পেইজটি ওপেন হবে।
আপনার জিডির কপি আপলোড করে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করে নিশ্চিত করুন পেইজে যেতে হবে।
সপ্তম ধাপঃ নিশ্চিত করুন।
ষষ্ঠ ধাপের পেইজে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোডের পর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করলে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
এই পেইজে আপনার দেওয়া সমস্ত তথ্য সঠিক আছে কিনা সেটা সেটা নিশ্চিত হোন। এরপর আবেদন করতে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করুন।
অষ্টম ধাপঃ আইডি কার্ড সংগ্রহ।
আপনার আবেদনের ২ সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে SMS এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে আইডি কার্ডের রি-ইস্যুর অবস্থা বা কবে প্রদান করা হবে। মোবাইলে SMS এর তথ্য অনুযায়ী নির্ধারিত দিন ও সময়ে যথাস্থানে উপস্থিত হয়ে আপনার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
শেষ কথা।
আপনার ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে গেলে সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে রি-ইস্যু বা ডাউনলোড করা যাবে। এই জন্য উপরের লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে নিজে নিজেই ঘরে বসে আপনার আইডি কার্ড র-ইস্যু বা ডাউনলোড করতে পারবেন।