ভোটার তথ্য যাচাই ২০২৩। অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাই করুন।

বাংলাদেশের নাগরিকদের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য যাচাই করতে হয়। ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য বা ভোটার তথ্য যাচাই এখন অনলাইনেই করা যায়। আজ আমরা বিস্তারিত ভাবে জানবো কিভাবে অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাই করা যায়। চলুন জেনে নেই, ভোটার তথ্য যাচাই ২০২৩।

পূর্বে ভোটার আইডি কার্ডের যে কোন সেবা নিতে সরাসরি এই service.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সেবা পাওয়া যেত। এখন আর সেই সুযোগ নেই। বর্তমানে শুধু মাত্র NID নম্বর বা ফরম নম্বর দিয়ে অনলাইনে NID একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন এবং মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে ভোটার আইডি তথ্য যাচাই করা যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারের ভুমি মন্ত্রণালয় এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সেবা দেওয়া স্থাগিত করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। যার কারনে জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID যাচাই সেবা বন্ধ রয়েছে।

ভোটার তথ্য যাচাই ২০২৩।

ভোটার তথ্য যাচাই বা NID নম্বর যাচাই একটি নিয়মিত কাজ। অফিস-আদালতে চাকুরীর ক্ষেত্রে, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এবং বিভিন্ন সময় সরকারী-বেসরকারী সেবা নিতে ভোটার বা NID তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। প্রযুক্তির সুবাদে আপনি নিজে নিজেই যে কারো ভোটার বা NID তথ্য যাচাই করতে পারবেন ঘরে বসে।

ব্যক্তির সঠিকতা যাচাই করার জন্যই এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে যে সব জায়গায় ভোটার বা NID তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলো-

  • ব্যাংক একাউন্ট করতে।
  • পাসপোর্ট এর জন্য আবেদনের সময়।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময়।
  • জমি ক্রয়-বিক্রয় করার সময়।
  • ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে।
  • চাকুরীর ক্ষেত্রে।
  • বিবাহ বা তালাকের সময়।
  • বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়ার ক্ষেত্রে।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর সময় সরকারী-বেসরকারী পর্যায় ভোটার বা NID তথ্য যাচাই করা হয়। তা না হলে যে কোন সময় কুচক্রি মহল অবৈধ সুযোগ নিতে পারে।

ভোটার তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যম।

পূর্বে সহজেই নাগরিকগন সরাসরি এই service.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ভোটার তথ্য যাচাই করতে পারতো। এখন আর সেই সুযোগ নেই। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে বন্ধ করে দিয়েছ।

এখন ভোটার বা NID তথ্য যাচাই করতে হলে বিকল্প কয়েকটি ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে ভোটার বা NID তথ্য যাচাই করা যায়। যেমন-

  • নির্বাচন কমিশন তথা এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ঠিকানার মাধ্যমে।
  • ভূমি মন্ত্রণালয় তথা www.ldtax.gov.bd ঠিকানার মাধ্যমে।
  • মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে।

ভোটার তথ্য যাচাই ২০২৩।

ভোটার আইডি সঠিক কিনা অথবা কোন এলাকার ভোটার, ব্যক্তির স্থায়ী, অস্থায়ী ঠিকানা কোনটি তা যাচাই করা প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ব্যাংকিং লেন-দেনের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি বা NID কার্ড যাচাই করা আবশ্যক। ভোটার তথ্য যাচাই করা যায় দুটি মাধ্যমে। যথা-

  1. অনলাইনের মাধ্যমে।
  2. মোবাইল এস.এম.এস এর মাধ্যমে।

অনলাইনে আবার দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই করা যায়। যথা-

  1. https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ঠিকানার মাধ্যমে।
  2. www.ldtax.gov.bd ঠিকানার মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট তথা https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ঠিকানার মাধ্যমে ভোটার আইডি বা ভোটার তথ্য যাচাই করতে উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করার পর একাউন্ট রেজিস্ট্রার অপশন থেকে NID নম্বর বা ভোটার ফরম নম্বর এবং প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে ভোটার আইডি ডাউনলোড করে ভোটার তথ্য যাচাই করা যাবে।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

প্রথমে ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর NID নম্বর বা ভোটার নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা কোড পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে যেতে হবে।

ঠিকানা পুরণ।

প্রথম পেইজের সকল তথ্য পূরণের পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ২য় পেইজে আসতে হবে। এই পেইজে ব্যক্তির আইডি কার্ড অনুযায়ী স্থায়ী এবং অস্থায়ী ঠিকানা পূরণ করতে হবে। ঠিকানা সঠিক ভাবে পূরণ করে ৩য় পেইজে যেতে হবে।

মোবাইল ভেরিফিকেশন।

ঠিকানা পূরনের পর মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করতে হবে। ২য় পেইজের সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর ৩য় পেইজে মোবাইল ভেরিফিকেশন করতে হবে। ৩য় পেইজে এসে মোবাইল নম্বর দেখা গেলে নতুন নম্বর দেওয়া দরকার নেই। আর যদি না থাকে তাহলে নতুন একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে OTP এর জন্য বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করতে হবে।

বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP যাবে এবং পরবর্তী পেইজে চলে যাবে। এরপর OTP কোড বসিয়ে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশনের কাজ শেষ করতে হবে।

মোবাইল ভেরিফিকেশনের পর চতুর্থ পেইজে ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে। সেক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশনে OTP বসানোর পর চতুর্থ পেইজে নিয়ে আসা হবে।

ফেইস ভেরিফিকেশন।

চতুর্থ পেইজে আসার পর একটি QR কোড দেখা যাবে। QR কোড অন্য একটি মোবাইলে NID Walet ডাউনলোড করে  QR কোড স্ক্যান করে ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে।

ফেইস ভেরিফিকেশন করার পর চতুর্থ পেইজের নিচে আপডেট বাটনে ক্লিক করলেই ব্যক্তির প্রাথমিক তথ্য দেখা যাবে। এরপর সেখানে একটি পাসওয়ার্ড সেট করে বহাল বাটনে ক্লিক করলেই ব্যক্তির প্রফাইল পেইজ চলে আসবে।

এখান থেকে ব্যক্তির প্রফাইল দেখা যাবে। তার ভোটার তথ্য দেখা যাবে। সে কোন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং কোন এলাকার ভোটার তার বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা যাবে।

আরো জানুনঃ

ভুমি মন্ত্রণালয়য়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়য়ের ওয়েবসাইট তথা এই www.ldtax.gov.bd ঠিকানা এটি মূলত ভূমি মন্ত্রণালয়য়ের একটি ওয়েবসাইট। ভূমি মন্ত্রণালয়য়ের কোন সেবা অনলাইনে নিতে হলে এই ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়। এখানে প্রবেশ করা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল নম্বর আর জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটার আইডি যাচাই করা যায়।

তবে এখানে ফরম নম্বর দিয়ে ভোটার তথ্য যাচাই করা যাবে না বা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেননা। শুধু মাত্র ভোটার আইডি নম্বর দিয়ে যাচাই করা যাবে। নিম্মে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ভোটার আইডি যাচাই প্রক্রিয়া দেখানো হলো।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য প্রথমে এই www.ldtax.gov.bd ঠিকানা প্রবেশ করতে হবে। এখানে প্রবেশ করার পর নিম্মের পেইজটি ওপেন হবে।

ভোটার তথ্য যাচাই ২০২৩

নাগরিক নিবন্ধন।

উপরের পেইজে আসার পর প্রথমে মোবাইল নম্বর বসাতে হবে। এর পর NID কার্ডের নম্বর বা ১০৫ থেকে এস.এম.এসের মাধ্যমে আসা ভোটার বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরটি বসিয়ে দিতে হবে। এর পর জন্ম তারিখ বসিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ বাটনে ক্লিক করার কিছুক্ষণ পরেই ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য চলে আসবে। আর যদি আপনি নতুন ভাবে ভোটার হওয়ার আবেদন করে থাকেন তখন কিছু নাও আসতে পারে। কেননা আপনার ভোটার আইডি এখনো অনলাইনে আপডেট হয়নি।

যদি আপনার আইডি কার্ড নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপডেট হয়ে থাকে তাহলে নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও ছবি দেখতে পাবেন।

এভাবে আপনি মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ভোটার আইডি যাচাই করতে পারেন ঘরে বসে।

মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে যে কোন তথ্য জানাতে নাগরিকগনকে ১০৫ নম্বর থেকে এস.এম.এস করা হয়। আর এই মোবাইল এস.এম.এস এর পদ্ধতি ব্যবহার করেই ভোটার তথ্য যাচাই করা যায়।

মোবাইলের মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে  SC স্পেস F স্পেস দিয়ে এসএমএসের মাধ্যমে আসা আইডি কার্ড নম্বর অথবা NID কার্ডের নম্বর বসিয়ে স্পেস দিয়ে D এবং স্পেস দিয়ে জন্মতারিখ লিখে এসএমএসটি ১০৫ নাম্বারে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এছাড়া এসএমএসের মাধ্যমে আসা আইডি কার্ড নম্বর অথবা NID কার্ডের নম্বর ব্যতীত ভোটার স্লিপ নম্বর দিয়েও ভোটার তথ্য যাচাই করা যাবে।

অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড করার সময়ে বায়োমেট্রিক দেওয়ার পর যে স্লিপ দেওয়া হয় সেখানে যে নম্বরটি থাকে সেটি এস.এম.এস করে ১০৫ নম্বরে পাঠালেও ২৪ ঘন্টার ভিতরে ফিরতি এসএমএস এ আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

যেমন মোবাইলের মেসেজ অপশনে এভাবে এস.এম.এস করতে হবে= SC <space> F <space> NID/from number <space> D <space> Date of birth

উপরের দুটি মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই করা যাবে। অনলাইনের মাধ্যম দুটি। অর্থাৎ দুটি অনলাইন ঠিকানা বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এবং একটি মোবাইল এস.এম.এস অপশন ব্যবহার করে ভোটার তথ্য যাচাই করা যাবে।

শেষ কথা।

অনলাইনে ভোটার আইডি বা ভোটার তথ্য যাচাই করা একেবারে সহজ। আশা করি আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে নিজে নিজে ঘরে বসে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য যাচাই করতে পারা যাবে মাত্র ২ থেকে তিন মিনিটের মধ্যে।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment