সাফ কবলা দলিলের খরচ ২০২৩

সাধারণত সাফ কবলা দলিল শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমরা আমদের সম্পত্তি বিভিন্ন কারনে একে অন্যের কাছে বিক্রয় করে থাকি। নিজের সম্পত্তি বিক্রয় এবং সম্পত্তি ক্রয় করতে এই সাফ কবলা দলিল করতে হয়। কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রারী করতে খরচের হিসাব নিয়ে আমরা অনেক ঝামেলায় পড়ে যাই। কেননা অনেকেই জানিনা সাফ কবলা দলিলের খরচ কত। যারা জানতে চান নতুন অর্থ বছরে সাফ কবলা দলিলের খরচ কত তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। চলুন জেনে নেই সাফ কবলা দলিলের খরচ ২০২৩

সাফ কবলা দলিল কি

ইংরেজী sale শব্দের অর্থ বিক্রয়। ষ্ট্যাম্প আইনে জমির সিডিউল বা তফসিলে ব্যবহৃত Conveyance শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো- স্বত্ব হস্তান্তরপত্র বা স্বত্বান্তরপত্র। যেহেতু সম্পত্তির মালিক চিরদিনের জন্য সম্পত্তির উপর একটি দালিলিক চুক্তির মাধ্যমে তার স্বত্ব ত্যাগ বা অধিকার হারিয়ে অন্য জনের নিকট হস্তান্তর করে, সেহেতু এই দালিলিক চুক্তিকে সাফ কবলা দলিল বলে।

জমি, ফ্লাট বা প্লট ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের দালিলিক চুক্তিকে সাফ কবলা দলিল বলে। আরো বলতে গেলে,যে দলিল দ্বারা কোন ব্যাক্তি তার স্থাবর সম্পত্তির মালিকআনা তার জীবদ্দশায় উক্ত সম্পত্তির স্বত্ব চিরদিনেরে জিন্য বিক্রয়মূলে হস্তান্তর করেন তাকেই বিক্রয় দলিল বলে।

সহজ কথায় কোন আর্থিক মূল্যের বিনিময়ে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা চিরদিনের জন্য হস্তান্তর বিষয়ক সম্পাদিত  লিখিত চুক্তি বা দলিলকে সাফ কবলা দলিল বলে।

দলিল করতে কি কি লাগে

দলিল বা সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে বর্তমানে নিম্মোক্ত বিষয়গুলোর প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়।

  • উভয় পক্ষ(ক্রেতা-বিক্রেতা) স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে।
  • ক্রেতা বিক্রেতা উভয় পক্ষের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মূল কপি সাথে রাখতে হবে।
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দলিলের সাথে আঠা দিয়ে লাগাতে হবে।
  • ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটো কপি জমা দিতে হবে।
  • দলিলে লিখিত মূল্য ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে ক্রেতার TIN নাম্বারের কাগজ এবং রিটার্ন সিলিপ জমা দিতে হবে।
  • দুই জন সাক্ষী এবং একজন পরিচয় দানকারী প্রয়োজন হবে।

সাফ কবলা দলিলের খরচ ২০২৩

নতুন অর্থ বছরের বাজেটে সাফ কবলা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচের পরিমান সামান্য বাড়ানো হয়েছে। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে বিভিন্ন খাতে যেমন রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প শুল্ক, স্থানীয় সরকার কর এবং উৎসে আয়কর (53H) সহ আরো অন্যান্য ফি প্রদান করতে হয়। এর মধ্যে উৎসে আয়কর (53H) ফি বাড়ানো হয়েছে। আর বাকী খরচের পরিমান আগের মতোই আছে।

উৎসে আয়কর (53H) ফি আগে ছিলো স্থানীয় ভেদে দলিল মূল্যের ২%-৪% টাকার মধ্যে।  নতুন অর্থ বছরের বাজেটে এই খরচের পরিমান বাড়িয়ে ৪%-৮% পর্যন্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে সাফ কবলা দলিলের খরচ বের করতে আর পেরেশানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু সচেতন হলে নিজে নিজে ঘরে বসে বের করতে পারবেন আপনার সাফ কবলা দলিলের খরচ কত? এই জন্য প্রয়োজন হবে একটি মোবাইল অথবা একটি কম্পিউটার। সাথে থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ।

রেজিস্ট্রেশিন ফি আমরা দুই ভাবে বের করতে পারি যথা-

  1. দলিল ফি ক্যালকুলেটর ওয়েবসাইট বা Apps এর মাধ্যমে।
  2. সাধারণ ম্যানুয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে।

দলিল ফি ক্যালকুলেটর ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ

অত্যান্ত সহজ ভাবে মাত্র এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই সাফ কবলা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ বের করা যায় এই পদ্ধতিতে। এই জন্য নিম্মের ধাপ গুলো অনুসরন করতে হবে।

১ম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

দলিল ফি ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে দলিলের খরচ বের করতে আপনাকে প্রথমে  প্রবেশ করতে হবে যে কোন ব্রাউজারের (গুগল বা গুগল ক্রম) মাধ্যমে এই https://fees.dolil.com/ লিংকে। এখানে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার সামনে নিচের ইন্টারফেইসটি ওপেন হবে।

সাফ কবলা দলিল খরচ

২য় ধাপঃ দলিলের তথ্য প্রধানঃ

উপরের পেইজে প্রবেশের পর আপনাকে দলিলের কিছু তথ্য প্রধান করতে হবে। পর্যায় ক্রমে নিম্মের তথ্য সিলেক্ট করতে হবে।

  • দলিলের প্রকৃতি।
  • বিভাগের নাম।
  • জেলার নাম।
  • রেজিস্ট্রারি অফিসের নাম
  • জমির মোট মূল্য (যাহা  দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে)।
  • জমির দলিলের
  • মোট দলিল মূল্য(স্থাপনা সহ যদি থাকে)

সব শেষে ফলাফল বাটনে ক্লিক করতে হবে। ফলাফল বাটনে ক্লিক করলে নিচের সম্পূর্ণ হিসাবের বিবরণ আপনার সামনে চলে আসবে।

সাফ কবলা দলিল খরচ

উপরের পেইজটি একসাথে উপরে নিচে দেখা যাবে। যেমন প্রথম সিলেক্টেট অংশ, এর নিচে খরচের বিবরণ, নিচের অংশে অর্থ পরিশোধ পদ্ধতি দেখানো হবে।

এভাবে উক্ত লিংকটি ব্যবহার করে সহজেই আপনি সাফ কবলা দলিলের খরচ বের করতে পারবেন।

সাধারণ ম্যানুয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে।

যেমন ধরি, ঢাকার ডেমরা এলাকার একটি জমির মূল্য ২০,০০,০০০/-( বিশ লক্ষ টাকা)। যেখানে কোন স্থাপনা নেই (স্থাপনা থাকলে তার মূল্য দলিলে উল্লেখ করলে তখন বেশী হবে)। এখন এই জমির দলিলের খরচ কত হবে তাহা আমরা বের করবো।

  • রেজিস্ট্রেশন ফিঃ দলিল মূল্য ২০,০০০০০/- এর ১%=                ২০,০০০/-
  • ষ্ট্যাম্প শুল্কঃ দলিল মূল্য ২০,০০০০০/- এর ১.৫%=                    ৩০,০০০/-
  • স্থানীয় সরকার ফিঃ দলিল মূল্য ২০,০০০০০/- এর ৩%=           ৬০,০০০/-
  • উৎসে আয়কর (53H) ফিঃ দলিল মূল্য ২০,০০০০০/- এর ৮%= ১৬০,০০০/-
  • হলফনামা,৩০০ টাকার স্ট্যাম্পেঃ                                              ৩০০/-
  • ই-ফিসঃ                                                                                     ১৩০/-
  • এন ফিসঃ                                                                                   ১৬০/-
  • এন.এন ফিস( নকল নবিশদের পারিশ্রমিক) ঃ                         ২৪০/-

মোট খরচ=                                                                                        ২৭০,৮৪০/-

আরো জানুনঃ

ফি পরিশোধ পদ্ধতিঃ

সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় ফি স্থানীয় সোনালী ব্যাংক এর ট্রেজারি শাখায় পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা প্রদান করতে হবে। যেমন-

  • রেজিস্ট্রেশন ফি, ই ফি এবং এন ফি একসাথে একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক এর কোড নং ১-২১৬১-০০০০-১৮২৬ তে জমা প্রদান করতে হবে।
  • ষ্ট্যাম্প শুল্ক (দলিলে ব্যবহৃত স্ট্যাম্প বাদে) পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোড নং ১-১১০১-০০২০-১৩১১ তে জমা প্রদান করতে হবে। দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যাবে।
  • স্থানীয় সরকার কর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন NRBC ব্যাংক বুথে জমা প্রদান করতে হব। যেখানে NRBC ব্যাংকের বুথ নেই সেখানে সোনালী ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের ব্যাংক হিসাবে জমা প্রদান করতে হবে।
  • উৎসে আয়কর (53H) পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোড নং ১-১১৪১-০০০০-০১১১ তে জমা প্রদান করতে হবে।
  • এনএন ফি( নকল নবিশদের পারিশ্রমিক) নগদে রেজিস্ট্রেরি অফিসে জমা প্রদান করতে হবে।

এছাড়া ভূমি উন্নয়ন সংস্থা বা ভবন নির্মান সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় অতিরিক্ত ফিসাদিঃ

  • উৎসে আয়কর (53FF) পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোড নং ১-১১৪১-০০০০-০১০১ তে জমা প্রদান করতে হবে।
  • ভ্যাট/মূসক চালানরে মাধ্যমে কোড নং ১-১১৩৩-০০০০-০৩১১ তে জমা প্রদান করতে হবে।

বিঃ দ্রঃ রেজিস্ট্রেশন খরচ স্থান ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক বা সিডিএ) সহ আরো কিছু এলাকার জমি, ফ্লট, ফ্লাটের সাফ কবলা দলিলের খরচের তারতম্য রয়েছে। রেজিস্ট্রারি অফিসে তার একটি তালিকা পাবেন অফিস সহকারীর কাছে। সেখান থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করে নির্দেশনার আলোকে ফিসাদি পরিশোধ করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ফিসের বিস্তারি তালিকা দেখুন এই লিংকে।

শেষ কথাঃ

জমি কিনতে গিয়ে দলিল খরচ নিয়ে আমরা অনেকেই হয়রানির স্বীকার হই। প্রতারকদের প্রতারণার কারনে অনেকের টাকা নষ্ট হয়। তাই প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সচেতন হতে হবে। নিজ থেকে জানতে হবে দলিলের খরচ সমূহ। এই জন্য উপরের আর্টিকেলটি আপনি পড়লে আশা করি কারো সহযোগীতা ছাড়া নিজে নিজেই বের করতে পারবেন আপনার দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ কত বা জানতে পারবেন সাফ কবলা দলিলের খরচ ২০২৩।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment