হেবা দলিল কি। হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ-২০২৩।

আমাদের সমাজে একজন আরেকজনকে আদর করে খুশি হয়ে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হেবা বা দান করে থাকে। কিন্তু এই হেবা বা হেবা দলিল কি তাহা অনেকেরই অজানা। এমনকি হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ বর্তমানে কত তাও আমরা জানিনা। হেবা দলিল সম্পর্কে না জেনে অনেকেই মনগড়া কথা বলে থাকে। তাই হেবা দলিল সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। আজ আমরা এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো হেবা দলিল কি বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ-২০২৩ সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই হেবা দলিল কি।

হেবা কি।

হেবা শব্দটি আরবী। এর আবিধানিক অর্থ অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা। আর হেবার সাধারন অর্থ দান করা। পরিভাষায় কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্বেচ্ছায় কোন রকমের বিনিময় ব্যতীত নিজের স্বতঃ ত্যাগ করে অন্য কে মালিক বানিয়ে দেওয়াকে দান বা হেবা বলে।

সহজ কথায় নিজের কোন সম্পত্তি কোন রকমের বিনিময় ছাড়া অন্য কাউকে চিরদিনের জন্য দান করাকে হেবা বলে।

আরো জানুনঃ

হেবার শর্ত।

দান বা হেবা করার সময় অবশ্যই কয়েকটি শর্ত মানতে হবে অন্যথায় হেবা বাতিল হয়ে যেতে পারে। হেবার সময় নিম্মের শর্ত গুলো মানতে হবে। যথা-

  1. দাতা কর্তৃক গ্রহিতাকে দখল করার প্রস্তাব।
  2. গ্রহীতা কর্তৃক  দাতার প্রস্তাব গ্রহণের সম্মত।
  3. সম্পত্তি দাতার দখলে থাকা।
  4. গ্রহীতা কর্তৃক দানকৃত সম্পত্তির দখল বুঝে নেওয়া।
  5. হেবা দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করে দিতে হবে।

হেবা দলিল কি।

হেবা অর্থ দান করা। দলিল শব্দের অর্থ লিখিত চুক্তি। আমরা যখন কোন চুক্তিকে দালিলিক রুপ দেই তখন তাকে দলিল বলে। সুতারং নিজের কোন সম্পত্তি কোন রকমের বিনিময় ছাড়া অন্য কাউকে চিরদিনের জন্য দান করাকে হেবা বলে। আর এই হেবা করা সম্পত্তি যখন লিখিত আকারে দান করে দেয়া হয় তখন তাকে হেবা দলিল বলে।

হেবার প্রকারভেদ।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম হেবা দলিল কি। এখন আমরা আলোচনা করবো হেবা দলিলের প্রকারভেদ নিয়ে । অর্থাৎ হেবা দলিল কয় প্রকার হতে পারে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী হেবা দলিল সাধারণত দুই প্রকার। যথ-

  1. হেবা বা সাধারন হেবা (Simple Heba)।
  2. হেবা-বিল-এওয়াজ (Heba Bil Awaz)।

 সাধারন হেবা (Simple Heba)।

সাধারণ হেবা হলো বিনিময় ছাড়া দান। অর্থাৎ যে হেবার কোন প্রকার প্রতিদান নেই এবং দাতা অবিলম্বে দানকৃত সম্পত্তি গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করেন । কোন রকমের বিনিময় বা মূল্য ছাড়া অন্য কে সম্পত্তি দান করাকে হেবা বা সাধারন হেবা (Simple Heba) বলে। সাধারণ হেবার শর্ত-

  1. বিনিময় মূল্য ব্যতীত দাতা কর্তৃক গ্রহিতার নামে সম্পত্তি দান করে দিতে হবে।
  2. দাতার মালিকানা বা স্বত্ব পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক ইচ্ছা বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
  3. দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।

হেবা-বিল-এওয়াজ (Heba Bil Awaz)।

সাধারণ হেবায় কোন রকমের মূল্য আদান প্রদান করা হয় না। কিন্তু হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ এ বিনিময়ের শর্তে করা হয়। যে হেবা দলিল কোন অর্থ বা বিনিময়ের শর্তে করা হয় তাকে হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ দলিল বলে। প্রকৃতপক্ষে এবং দৃষ্টত এটি বিক্রয় সমতুল্য (as good as sale)। এতে ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তির যাবতীয় উপাদানই বিদ্যমান। সম্পত্তির মূল্য কম-বেশি যাই হোকনা কেন অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময় দান করার দলিলকে হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ (Heba Bil Awaz) বলে। এই দলিলের বা হেবার শর্ত দুটি। যথ-

  1. সম্পত্তি গ্রহিতা কর্তৃক বিনিময় মুল্য প্রকৃত বা বাস্তবিক পক্ষেই হেবা কারীকে দিতে হবে।
  2. দাতার মালিকানা বা স্বত্ব পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক ইচ্ছা বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।

হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন।

মুসলিম পারিবারিক সম্পত্তির আইন অনুযায়ী হেবা দলিল লিখিত বা রেজিষ্টি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি হেবার ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে দাতা বা গ্রহীতা কে কোন রকমের বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হয় নি।

তদুপরি ২০০৫ সালের মুসলিম সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা এবং একই সালের The Registration Act 1908–এর ১৭ ধারা সংশোধনের ফলে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির হেবা রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বৈধ হবে না।

দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া।

অন্যান্য সাধারণ দলিল যে প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশন করা হয়, হেবা দলিল সেই প্রক্রিয়াই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে হেবা দলিলের ফরমেট একটু ভিন্ন রকমের হয়। এই দলিলে কোন প্রকারের হেবা করা হচ্ছে তাহা উল্লেখ করতে হয়। দাতা কি কারনে তার সম্পত্তি হেবা বা দান করছেন তা উল্লেখ করতে হবে এবং কত টাকা বা কিসের বিনিময় দান করছেন সেটার পরিমানও উল্লেখ থাকতে হবে।

হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ-২০২৩।

হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ আমরা দুই ভাবে বের করতে পারি। যথা-

  1. দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস ক্যালকুলেটর পদ্ধতিতে।
  2. সাধারণ বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।

দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস ক্যালকুলেটর পদ্ধতি।

এখন আর দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ বা ফিস নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। আপনি যদি একটু সচেতন হোন তাহলে ঘরে বসেই এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই বের করতে পারবেন হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ কত। নিম্মে আমরা দেখাবো কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন খরচ বের করা যায়।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

রেজিস্ট্রেশন ফিস ক্যালকুলেটর পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন খরচ বের করতে প্রথমে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে এই https://fees.dolil.com/ ঠিকানায়। এখানে প্রবেশ করার সাথে সাথে নিম্মের ইন্টারফেসটি আপনার সামনে দেখতে পাবেন।

হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন

দলিলের তথ্য প্রদান।

হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ

এই পেইজে আপনার দলিলের কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন-

  • দলিলের প্রকৃতি( হেবার ঘোষণা পত্র, দানের ঘোষণা পত্র, দান পত্র বা হেবাবিল এওয়াজ ইতাদি)
  • বিভাগের নাম (সম্পত্তি যে বিভাগে অবস্থিত)।
  • জেলার নাম((সম্পত্তি যে জেলায় অবস্থিত)।
  • অফিসের নাম (যে সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে রেজিস্ট্রেশন হবে)।
  • হেবাকৃত সম্পত্তির মূল্য( দলিলে উল্লেখিত মূল্য)
  • দলেলের পৃষ্ঠা সংখ্যা।

উপরের তথ্যগুলো সঠিভাবে সিলেক্ট করে নিচের সবুজ রঙের ফলাফল বাটনে ক্লিক করতে হবে। উল্লেখ্য জমির মূল্য উল্লেখ করার পর মোট দলিল মূল্য অটোমেটিক চলে আসবে। ফলাফল বাটনে ক্লিক করার পর নিচের মতো খরচের বিস্তারিত পেইজটি দেখতে পাবেন।

দলিলের মোট খরচ।

আগের পেইজে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি হেবা দলিলের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা। এই দলিলের খরচ নিম্মরুপ-

হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ

উপরের পেইজে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি হেবা দলিলের মূল্য ধরা হয়েছিলো মাত্র ৫ লক্ষ টাকা। আর এই দলিলের মোট খরচ ২৮,৩১০/-।

সাধারণ বা ম্যানুয়াল পদ্ধতি।

সাধারণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ বের করতে একটি উদাহরনের সাহায্য নিবো। যেমন কোন হেবা বিল এওয়াজ দলিলের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। এখন এই দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ হবে নিম্মরুপ-

  • রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০০০০/-এর ১%                    =৫০০০/-
  • স্ট্যাম্প শুল্ক ফি ৫০০০০০/-এর ১.৫%                 =৭৫০০/-
  • স্থানীয় সরকার কর ৫০০০০০/-এর ৩%               =১৫০০০/-
  • হলফনামা                                                          =৩০০/-
  • ই ফিস                                                               =১০০/-
  • এন ফিস                                                            =১৬০/-
  • এন এন ফিস( নকল নবিশদের ফি)                      =২৪০/-
  • কোর্ট ফি                                                            =১০/-

        মোট খরচ                                                        =২৮,৩১০/-

উল্লেখ্য যে এই হেবাবিল এওয়াজ দলিলের উৎসে আয়কর (53H),উৎসে আয়কর (53HH) এবং উৎসে আয়কর (53HH প্রযোজ্য নয়।

শেষ কথা।

উপরোক্ত আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন হেবা দলিল সম্পর্কে । আর সাথে সাথে জানতে পারবেন হেবা দলিল কিভাবে করবেন এবং এর রেজিস্ট্রেশন খরচ কি পরিমান হবে।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment