ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচ ২০২৩

ফ্লাট ক্রয় করতে গিয়ে অনেকেই নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন খরচ নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। রেজিস্ট্রেশন খরচের সঠিক পরিমান জানা না থাকায় প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অনেকের টাকা নষ্ট হয়। অনেকে ফ্লাট ক্রয় করতে গিয়ে নানান জনের কাছে জানতে চায় রেজিস্ট্রেশন খরচের পরিমান কত। যারা ফ্লাট ক্রয় করতে রেজিস্ট্রেশন খরচ জানতে চান, তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি। চলুন জেনে নেই ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচ ২০২৩

ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচ ২০২৩

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়ানো হয়েছে। বিগত অর্থ বছরের থেকে নতুন অর্থ বছরে রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়ানো ফলে ফ্লাট ক্রয়ের খরচ বেড়ে যাবে। আসলে বাংলাদেশ সরকার নতুন অর্থ বছরে সঠিকা কি পরিমান ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়িয়েছে তাহা অনেকেই জানেনা। নানান জনে নানা ভাবে খরচের হিসাব দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাই আমাদের জানতে হবে  ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ সর্বমোট কত বাড়ানো হয়েছে।

বিগত অর্থ বছরে জমি ও ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ ছিলো মোট যথাক্রমে ৯% ও ১১%। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ সর্বমোট ৯%। আর ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ সর্বমোট ১১%। তবে এলাকাভেদে উক্ত খরচের পরিমানের তারতম্য রয়েছে। বর্তমানেও বিভিন্ন এলাকাভেদে এই খরচের পরিমান বাড়ানো হয়েছে। খরচের হিসাব জানার আগে আমাদের জানতে হবে ফ্লাট রেজিস্ট্রেশনে কোন কোন খাতে খরচ দিতে হয়।

আরো জানুনঃ

ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচের বিভিন্ন খাতঃ

ফ্লাটের দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে নিম্মের ৬(ছয়) টি খাতে খরচ প্রদান করতে হয়।যথ-

  1. রেজিস্ট্রেশন ফি।
  2. স্ট্যাম্প শুল্ক ফি।
  3. স্থানীয় সরকার ফি।
  4. উৎসে আয়কর(গেইন ট্যাক্স)।
  5. ভ্যাট (জমি ক্রয়ে এই ভ্যাটের প্র্যয়োজন নেই)।
  6. অন্যান্য ফি( এন.ফি, এন,এন.ফি ইত্যাদি)

নিম্মে নতুন অর্থ বছরের বাজেট অনুযায়ী  উপরোক্ত ৬(ছয়) টি খাতের খরচের পরিমান বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

রেজিস্ট্রেশন ফি।

পূর্বে ফ্লাটের দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে যে ফি ছিলো বর্তমানে সেটাই রয়েছে। এই খাতের খরচের পরিমান বাড়ানো হয়নি। অর্থাৎ বগত বছরে ছিলো দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ১%, বর্তমানে উক্ত ১% ই রয়েছে। এই মূল্য ২৪,০০০ টাকা বা তার কম হলে নগদ অর্থে এবং ২৪,০০০ টাকার বেশি হলে পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ, কোড নং ১৪২২২০১ তে জমা করতে হবে।

স্ট্যাম্প শুল্ক ফি।

দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১.৫% টাকা স্ট্যাম্প শুল্ক ফি দিতে হবে। দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্টাম্প ব্যবহার করা যাবে। স্টাম্প খাতের বাকি অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ কোড নং ১১৬২১০২ তে জমা করতে হবে।

স্থানীয় সরকার ফি।

এই ফি দলিলে উল্লেখিত মোট মূল্যের ৩% হারে জমা দিতে হবে। বিগত অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার ফি ৩% ই ছিলো। বর্তমানে ৩% ই বহাল আছে।

উৎসে আয়কর(গেইন ট্যাক্স)।

পূর্বে এই উৎসে আয়কর বা গেইন ট্যাক্স প্রদান করতে হতো ৪% টাকা। নতুন অর্থ বছরে এই খাতের খরচের পরিমান দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ৪% থেকে বাড়িয়ে ৮% করা হয়েছে। তবে এলাকা ভেদে এই খাতের খরচের পরিমানের তারতম্য রয়েছে। যেমন-

ঢাকা মহানগরী ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য পূর্বে এই কর ছিলো ৪%। সেটা এখন ৮% করা হয়েছে। অন্যান্য মহানগরী এবং জেলা সদর পৌর এলাকার জন্য ৩% থেকে বাড়িয়ে ৬% করা হয়েছে। এছাড়া  অন্যান্য পৌরসভার জন্য ২% থেকে ৪% করা হয়েছে।

ভ্যাট (জমি ক্রয়ে এই ভ্যাটের প্র্যয়োজন নেই)।

দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ২% ভ্যাট দিতে হয়। তবে ফ্লাটের পরিমান ১৬০০ স্কায়ারফুট পর্যন্ত ২% ভ্যাট। আর যদি ১৬০০ স্কায়ার ফুটের বেশি হয় তাহলে ৪.৫০% ভ্যাট দিতে হবে। আর জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই ভ্যাটের প্রয়োজন নেই।

অন্যান্য ফি( এন.ফি, এন,এন.ফি ইত্যাদি)

অন্যান ফি এর মধ্যে রয়েছে-

  • ২০০ টাকার স্টাম্পে হলফনামা।
  • ই-ফি-১০০ টাকা।
  • এন.ফি-বাংলায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা এবং ইংরেজী ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।
  • এন.এন.ফি (নকল নবিশগনের পারিশ্রমিক)- বাংলায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা এবং ইংরেজী ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।
  • এছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর নোটিশের আবেদনপত্রে ১০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি লাগাতে হবে।
  • এন.এন.ফি (নকল নবিশগনের পারিশ্রমিক) ছাড়া বাকী সকল ফি রেজিস্ট্রেশন ফি এর সাথে পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোড নং ১৪২২২০১ তে জমা করতে হবে। আর এন.এন ফি নগদে রেজিস্ট্রি অফিসে জমা করতে হবে।

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন ফি এর চার্টঃ

     বিবরণ                                                           পূর্বের রেট                                             বর্তমান রেট

  • রেজিস্ট্রেশন ফি……………………………………………………………১%……………………………………………………………১%
  • স্ট্যাম্প শুল্ক ফি……………………………………………………………১.৫০%……………………………………………………..১.৫০%
  • স্থানীয় সরকার ফি…………………………………………………………২%……………………………………………………………২%
  • উৎসে আয়কর(গেইন ট্যাক্স)………………………….৪%…………………………………………………৮%
  • ভ্যাট (জমি ক্রয়ে এই ভ্যাটের প্র্যয়োজন নেই)…………..২%……………………………………………………………….২%
  • অন্যান্য ফি( এন.ফি, এন,এন.ফি ইত্যাদি)……………………০.৫০%……………………………………………………….০.৫০%

                                                           মোটঃ                  ১১%……………………………………………………১৫%

উদাহরনঃ উপরের চার্টটি একটি উদাহরণ এর সাহায্যে বুঝে নিতে চাই। ধরুন আপনি গুলশান এলাকায় একটি ফ্লাট ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই ফ্লাটের মুল্য ধরা হয়েছে ৫০,০০,০০০/-টাকা। এখন এই ফ্লাটের রেজিস্ট্রেশন করতে মোট খরচ হবে-

  • রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০,০০,০০০* ১%=৫০,০০০/-
  • স্ট্যাম্প শুল্ক ফি ৫০,০০,০০০* ১.৫০%=৭্‌৫,০০০/-
  • স্থানীয় সরকার ফি ৫০,০০,০০০*৩%=১,৫০,০০০/-
  • উৎসে আয়কর(গেইন ট্যাক্স) ৫০,০০,০০০*৮%=৪,০০,০০০/-
  • ভ্যাট (জমি ক্রয়ে এই ভ্যাটের প্র্যয়োজন নেই) ৫০,০০,০০০*২%=১,০০০০০/-
  • অন্যান্য ফি( এন.ফি, এন,এন.ফি ইত্যাদি) ৫০,০০,০০০*০.৫০%=২৫,০০০/-

সুতারাং ৫০,০০,০০০/- টাকার ফ্লাটের মোট রেজিস্ট্রেশন খরচের পরিমান দাড়ালো-(৫০,০০০+৭৫,০০০+১,৫০,০০০+৪,০০,০০০+১,০০,০০০+২৫,০০০)= ৮,০০,০০০০/-(আট লক্ষ টাকা)।

 

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment