জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

জমির খতিয়ান বের করতে বা খতিয়ানের কপি আনতে আর দিনের পর দিন বা ঘন্টার পর ঘন্টা ভূমি অফিসে অপেক্ষা করতে হবেনা। এখন ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার জমির খতিয়ানের কপি পেয়ে যাবেন। কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে খতিয়ানের কপি বের করবেন তা এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো। চলুন আলোচনা করা যাক, জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করতে মোবাইল এবং কম্পিউটার যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে কম্পিউটারের মাধ্যমে খতিয়ান বের করা অত্যান্ত সহজ। আজ আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম দেখাবো। তো চলুন শুরু করা যাক, কিভাবে জমির খতিয়ান বের করা যায়।

জমির খতিয়ান বের করতে যে সব কাগজ দরকার।

খতিয়ানের অনলাইন কপি বা সারটিফাইড কপি বের করতে আপনাকে নিম্মোক্ত তথ্য জানা থাকতে হবে। যথা-

  • জমির সঠিক অবস্থান তথা বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজার নাম।
  • খতিয়ান নম্বর।
  • দাগ নম্বর।
  • মালিকের নাম।
  • যিনি খতিয়ানের কপি বের করবেন তার ভোটার আইডি ও মোবাইল নম্বর।
  • খতিয়ানের ফি প্রদানের জন্য বিকাশ, রকেট, ekpay ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

আপনার জমির খতিয়ান বের করতে বা খতিয়ানের কপি পেতে নিম্মোক্ত ধাপগুলো অবলম্বন করুন।

ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

গুগল ক্রম ব্রাউজারে গিয়ে প্রবেশ করুন এই https://eporcha.gov.bd ঠিকানায়। উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করার পর আপনার সামনে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।

এই পেইজের উপরে সিরিয়ালে পাঁচটি অপশন দেখতে পাবেন। যথা-

  1. নির্দেশিকা
  2. সার্ভে খতিয়ান।
  3. নামজারী খতিয়ান।
  4. মৌজা ম্যাপ।
  5. আবেদনের অবস্থা।

উপরের অপশন থেকে আপনি সি.এস, এস.এ,আর.এস,বি.এস, সিটি ইত্যাদি বের করার জন্য সার্ভে খতিয়ান অপশনের উপর ক্লিক করুন। আর নামজারী বা মিউটেশন খতিয়ানের জন্য নামজারী খতিয়ান অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ-২ঃ আপনার জমির খতিয়ান যাচাই করুন।

এখন আপনি সি.এস, এস.এ,আর.এস,বি.এস, সিটি ইত্যাদি বের করতে সার্ভে খতিয়ান অপশনের উপর ক্লিক করুন। ক্লিক করলেই আপনার সামনে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়মউক্ত পেইজে প্রথমে আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে বিভাগ>জেলা>উপজেলা>খতিয়ানের ধরন। খতিয়ানের ধরন সিলেক্ট করার পরই মৌজার তালিকা দেখা যাবে।

তবে উক্ত খতিয়ানটি যদি অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে মৌজা দেখতে পাবেন। আর যদি অনলাইনে আপনার খতিয়ানটি অন্তর্ভুক্ত না হয় তাহলে মৌজায় কিছুই দেখা যাবে না এবং খতিয়ানের জায়গায় কিছুই দেখা যাবে না।

ধরুন আপনি আর.এস খতিয়ানের কপি বের করতে চান। সেক্ষেত্রে খতিয়ানের ধরন অপশনে আর.এস সিলেক্ট করুন। আর.এস সিলেক্ট করার সাথে সাথে পরের কলামে মৌজার তালিকা দেখতে পাবেন।

অতঃপর মৌজায় ক্লিক করলে আপনার সামনে পরবর্তী কলামে  খতিয়ানের তলিকা দেখতে পাবেন। আপনি যে খতিয়ানের কপি বের করতে চান সেটির উপর ডাবল ক্লিক করলেই নিচের ইন্টারফেইসটি ওপেন হবে।

আরো জানুনঃ

ধাপ-৩ঃ খতিয়ানের কপির জন্য আবেদন করুন।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়মএবার আপনি এই পেইজে জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর দেখতে পাবেন। এছাড়া উপরে হালসাবেক দেখার অপশন রয়েছে । যদি দেখতে চান তাহলে হালসাবেক বাটনে ক্লিক করতে হবে।

নিচে রয়েছে দুটি অপশন। যথা খতিয়ানের বিস্তারিত দেখার জন্য বিস্তারিত এবং ডান পাশে খতিয়ানের আবেদনের জন্য খতিয়ানের আবেদন অপশন রয়েছে। যদি আপনি খতিয়ানের বিস্তারিত দেখতে চান, তাহলে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করুন। এর পর খতিয়ানের অনলাইন বা সার্টিফাইড কপির জন্য খতিয়ানের আবেদন বাটনে ক্লিক করুন।

আবেদন ফরম পূরণ।

উপরের পেইজের নিচে খতিয়ানের আবেদন বাটনে ক্লিক করলেই খতিয়ানের আবেদন ফর্ম চলে আসবে। এই ফরমে যিনি আবেদন করছেন তার যেসব তথ্য দিতে হবে তাহলো-

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র নং।
  2. জন্ম তারিখ।
  3. সক্রিয় মোবাইল নম্বর।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

এই তিনটি তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে সবুজ চিহ্নিত যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে প্রদত্ত আইডি নম্বরের নাম ও ঠিকানা সহ অন্যান্য তথ্য চলে আসবে।

যাচাই করার পর আপনি আবেদনের ধরন সিলেক্ট করুন। অর্থাৎ আপনি যদি অনলাইন কপি চান তাহলে অনলাইন কপি বাটনে ক্লিক করুন। আর যদি সার্টিফাইড কপি বের করতে চান তাহলে সার্টিফাইড কপি বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এখানে আপনি দেখছেন যে, খতিয়ানের অনলাইন কপি পেতে চাইলে তাৎক্ষনিক দেখা যাবে বা ডাউনলোড করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ফি মাত্র ১০০/-টাকা। আর যদি সার্টিফাইড কপি বের করতে চান তাহলে সময় লাগবে ৭ দিনের মতো। খরচের পরিমান একই।

খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি দুই ভাবে নেওয়া যায়। যথা-

  1. সরাসরি অফিস কাউন্টার থেকে।
  2. ডাকযোগে।

সরাসরি অফিস কাউন্টার থেকে নিতে চাইলে খরচের পরিমান মাত্র ১০০ টাকাই হবে। আর যদি আপনি ডাকযোগে নিতে চান তাহলে ডাক খরচ ৪০ টাকা সহ মোট ১৪০/-টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ডাকযোগে নিতে চাইলে দেশের ভিতর অথবা দেশের বাইরে থেকেও নিতে পারবেন। সুতারাং দেশের ভিতরে নেওয়ার জন্য দেশের ভিতর বাটনে ক্লিক করুন।

ফি পরিশোধ করুন।

আবেদন ফরমের সকল অপশন পূরন এবং সিলেক্ট করার পর এবার ফি পরিশোধের পালা। সার্টিফাইড কপি বা অনলাইন কপির জন্য আপনি নিম্মোক্ত মোবাইল বা আই ব্যাংকিং এর মাধমে পরিশোধ করতে পারবেন।

  1. বিকাশ।
  2. নগদ।
  3. রকেট।
  4. উপায়।
  5. একপে/ekpay।

উপরের যে কোন একটি অপশন আপনি সিলেক্ট করুন, যেটা আপনার আছে। এর পর নিচের একটি যোগ অংক রয়েছে সেটি পূরণ করুন। সবশেষে নিচে ডানপাশের সবুজ চিহ্নিত পরবর্তী ধাপ(ফি পরিশোধ) বাটনে ক্লিক করুন।

পরবর্তী ধাপ(ফি পরিশোধ) বাটনে ক্লিক  করার পর আপনার সামনে ফি পরিশোধের ইন্টারফেইসটি চলে আসবে।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

এখানে আপনার একাউন্ট নম্বর দিয়ে confirm বাটনে ক্লিক করতে হবে।এরপর আপনার মোবাইলে একটি OTP কোড যাবে। কোডটি  বসিয়ে আবার confirm বাটনে ক্লিক করতে হবে।  অতঃপর পিন নম্বর বসিয়ে আবারো confirm বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এবার ডান পাশের কর্নারে সবুজ চিহ্নিত Payment Success অপশন দেখা যাবে। Payment Success অপশনে ক্লি করলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত খতিয়ানের কপিটি দেখা যাবে।

ধাপ-৪ঃ খতিয়ানের কপি ডাউনলোড।

জপমির খতিয়ান বের করার নিয়মউপরের সমস্ত কার্যক্রম এবং যথাযথভাবে ফি পরিশোধের পর আপনি যখন খতিয়ানের কপি দেখতে পাবেন তখন এটি ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। অথবা সরাসরি প্রিন্ট করতে পারেন। তবে অনলাইন কপি সার্টিফাইড কপি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু যাচাই করতে পারবেন।

শেষ কথা।

জমির ক্রয় বা যাচাই করতে আপনাকে আর ভূমি অফিসে গিয়ে লাইন বা সিরিয়াল দিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। ঘরে বসেই দু এক মিনিটের মধ্যেই আপনি আপনার জমির খতিয়ন বের করতে বা যাচাই করতে পারবেন।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment