ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম

ওয়ারিশ শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমাদের মুরব্বী বা পূর্ব পুরুষ যারা মারা যান তারা কোন না কোন ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকারী রেখে যান। বর্তমানে এই ওয়ারিশদের প্রাপ্য সম্পত্তি নিয়ে নানা জটিলতা দেখা যায়। এর একমাত্র কারন হলো ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকারী আইন বা নিয়ম কানুন সম্পর্কে না জানা। এই রকমই একটি বিষয় হলো ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারি করা। মৃত ব্যক্তির সম্পদ ওয়ারিশগন কিভাবে নিজেদের নামে নামজারি করবেন তা আমাদের জানা দরকার। চলুন জেনে নেই ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম

ওয়ারিশ কি?

আরবী শব্দ ওয়ারিশুন থেকে ওয়ারিশ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ উত্তারাধিকারী। ধর্মীয় আইন বা বিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যারা পাওয়ার যোগ্য হন, তাদেরকে ওয়ারিশ বলে।

অন্যভাবে বললে, কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার আগে তার সম্পত্তি যদি উইল না করে যান এবং তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি স্ত্রী , সন্তান সহ যারা পাওয়ার যোগ্য হন তাদেরকে ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকারী বলে।

মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকারী কারা।

মুসলিম উত্তারাধিকারী আইন  বা মুসলিম পারিবারিক আইনের প্রধান উৎস- কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস। যেমন কোরআনুল কারীমের সুরা নিসার ১১তম আয়াতে আল্লহ তাআলা ওয়ারিশদের সম্পর্কে বলেন- বাংলা অর্থঃ

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক।আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ।অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কারা ওয়ারিশ তা বলে দিয়েছেন। উপরের আয়াতের অর্থ অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে ওয়ারিশ ১২ (বারো) জন। যথা-

  1. পিতা
  2. মাতা
  3. স্মামী
  4. স্ত্রী
  5. কন্যা
  6. দাদা
  7. পুত্রের কন্যা
  8. দাদী বা নানী
  9. আপন বোন
  10. বৈমাত্রয় বোন
  11. বৈপিত্রেয় ভাই
  12. বৈপিত্রেয় বোন।

এদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন মহিলা। ওয়ারিশ কয় প্রকার ও কয়জন তাহা বিস্তারিত দেখুন এই লিংকে।

প্রাথমিকভাবে উপরের ৪ জন পুরুষ ও ৮ জন মহিলাই ওয়ারিশ সম্পত্তি পাওয়ার যোগ্য। যদি এদের মধ্যে কেউ না থেক তখন অন্য আত্মীয় যারা কাছের তারা ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি পাওয়ার যোগ্য হবে।

ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম

ওয়ারিশগন যখন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তারাধিকারী হোন তখন তার প্রাপ্য অংশের নামজারী বা রেকর্ড কেমনে করবেন সে বিষয়ে নিম্মে আলোচনা করা হলো।

নামজারি করতে কি কি লাগে।

উত্তারাধিকার বা ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারী করতে যে সব কাগজ ও ডকুমেন্টস লাগে তাহা নিম্মরুপ-

  • সর্বশেষ রেকডীয় পর্চা। অর্থাৎ মৃত ব্যাক্তির নামে মৃত্যুর আগে সর্বশেষ যে রেকর্ড করেছিলেন। যেমন-সি.এস/এস.এ/আর.এস/বি.এস/সিটি ইত্যাদি।
  • মূল দলিল।  অর্থাৎ যে দলিলের ভিত্তিতে (যদি সম্পত্তি ক্রয় করে থাকেন) মৃত ব্যক্তি জমির মালিক হয়েছিলেন।
  • ওয়ারিশ সনদ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন থেকে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদ আনতে হবে।
  • কোর্টের সাকশেসন সার্টিফিকেট (সম্ভব্য ক্ষেত্রে)।
  • ওয়ারিশদের প্রত্যেকের পাসপোর্ট সাইজের ছবি এক কপি করে।
  • মৃত ব্যক্তির পরিচয় পত্র বা NID কার্ড।
  • যারা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ তাদের প্রত্যেকের NID কার্ড বা পরিচয়পত্র।
  • ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টননামা দলিল। অর্থাৎ ব্যাক্তির মারা যাওয়ার পর তার সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে রেজিস্ট্রারী বন্টননামা দলিল করতে হবে(যদি প্রয়োজন হয়)।

নামজারী কোথায় করবেন।

নামজারি করতে স্থানীয় উপজেলা ভূমি অফিস বা সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর কার্যালয় গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে নামজারীর আবেদন করতে হবে। অনলাইন ছাড়া অপলাইনে করার সুযোগও রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস বা সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর কার্যালয় গিয়ে উপরোক্ত কাগজপত্র  সাথে নিয়ে অন্যান্য সাধারণ নাগরিকদের মতো প্রত্যেক ওয়ারিশ আলাদা বা একসাথে নামজারির আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন করার পর যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নামজারির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। নামজারী করার বিস্তারিত নিয়ম জানতে ক্লিক করুন ই নামজারি করার নিয়ম এই ঠিকানায়।

নামজারি করতে খরচ কত?

নামজারি করতে সরকারি খরচ একেবারে কম। যেমন এক খন্ড জমি নামজারির আবেদন করার সময়-

  • কোর্ট ফি প্রথম ২০/-টাকা
  • নোটিশ জারী ফি ৫০/- টকা সহ মোট ৭০/-টকা জমা দিতে হবে।
  • এর পর আপনার আবেদন গৃহীত হলে রেকর্ড সংশোধন বা হালনাগাদ ফি বাবদ ১০০০/- ( এক হাজার টাকা)।
  • প্রতি খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ ১০০/- (একশত) টাকা অনলাইনে জমা দিতে হবে।

দুইবারে মোট ১১৭০/-টাকা সরকারী খাতে জমা করতে হয়।

শেষ কথা।

ওয়ারিশ সম্পত্তি অথবা ক্রয় করা সম্পত্তির নামজারি করার পদ্ধতি একই রকম। তবে ওয়ারিশ সম্পত্তি নামজারি করতে অতিরিক্ত কিছু কাগজ অবশ্যই জোগাড় করতে হবে ওয়ারিশ প্রমান করতে। তাই প্রথমত আমাদের জানতে হবে ওয়ারিশ কারা এবং তাদের সম্পত্তির অংশ কত। এর পর প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করে নামজারির আবেদন করতে হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন ওয়ারিশ কি এবং কারা। এর পর তাদের সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment