ইলেকট্রনিকস পাসপোর্টের (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯ তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট এর কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম।
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম।
ই-পাসপোর্ট এর অনলাইনে আবেদন করতে প্রথমে আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে Bangladesh e-Passport Application Portal এর এই www.epassport.gov.bd ঠিকানায় ভিজিট করুন।
উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করে চারটি ধাপ অতিক্রম করে একটি পাসওয়ার্ড সেটাপ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন। নিম্মে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি দেখানো হলো।
ধাপ-১, ওয়েবসাইটে প্রবেশঃ
নিবন্ধন করতে Bangladesh e-Passport Application Portal এর এই www.epassport.gov.bd ঠিকানায় ভিজিট করুন। উক্ত ঠিকানায় ক্লিক করলে নিচের পেইজ ওপেন হবে।
এখান থেকে “Apply Online” অপশনটি বাছাই করে ক্লিক করুন। নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
এখানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এবং থানা নির্বাচন করুন।
অতঃপর নিচের continue বাটনে ক্লিক করুন। continue বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে ২য় ধাপে।
ধাপ-২, Email ঠিকানা প্রদানঃ
এই ধাপে আপনার সচ্ছল ই-মেইল ঠিকানা লিখুন। এর পর I am human অপশনে ক্লিক করুন।
অতঃপর continue বাটনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে ৩য় ধাপের ফরমটি ওপেন হবে।
ধাপ-৩, নিবন্ধন/অ্যাকাউন্ট এর জন্য তথ্য প্রদানঃ
উপরের ২য় ধাপের নিচে continue বাটনে ক্লিক করলেই নিচের ফরমটি ওপেন হবে।
এই ফরমে আপনার নিবন্ধন করার জন্য তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে প্রথমে ই-মেইল ও একটি নতুন পাসওয়ার্ড সেট করুন।
অতঃপর আপনার নাম, মোবাইল নং, এবং I am human অপশনে ক্লিক করুন।
সব শেষে নিচের সবুজ চিহ্নিত Creat Account বাটনে ক্লিক করতে হবে। এখানে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার সামনে চতুর্থ ধাপের মাধ্যমে একটি ম্যাসেজ চলে আসবে।
ধাপ-৪, নিবন্ধন সম্পন্নঃ
উপরের ফরমের নিচে Creat Account বাটনে ক্লিক করলে আপনি নিচের ইন্টারফেইসটি দেখতে পাবেন।আর সাথে সাথে আপনার ইমেইলে একটি conform ম্যাসেজ যাবে। যেখানে আপনার নিবন্ধন নিশ্চিতের তথ্য থাকবে।এভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আপনার একটি একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলো।
অতঃপর পূণরায় আপনি www.epassport.gov.bd এই ঠিকানায় প্রবেশ করুন। তারপরে ই-পাসপোর্টের আবেদন ও ফি পরিশোধের মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
আরো জানুনঃ
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম।
ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে আপনাকে নিম্মের কয়েকটি ধাপ অবল্বন করতে হবে।
প্রথমঃ পূণরায় ওয়েবসাইটে প্রবেশ।
আপনি যখন নিবন্ধন সম্পন্ন করে একটি পাসওয়ার্ড পেলেন, এরপর পূণরায় এই www.epassport.gov.bd ঠিকানায় প্রবেশ করুন।
এখানে প্রবেশ করে পোর্টালের হোম পেইজের ডান দিকের উপরে সাইন ইন বাটনে ক্লিক করুন। সাইন ইন বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে নিচের পেইজে।
দ্বিতীয়ঃ পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করুন।
নতুন ই-পাসপোর্ট আবেদন করার মূল কাজ শুরু হয় মূলত এখান থেকে। উপরের পেইজের নিচে Save and Continue বাটনে ক্লিক করলেই নিচের ফরমটি ওপেন হবে।
এখানে আপনার ই-পাসপোর্টের ধরণ সিলেক্ট করুন। অতঃপর Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন।
তৃতীয়ঃ ই-পাসপোর্ট ফরমে ব্যক্তিগত তথ্য ইনপুট।
উপরের পেইজের Save and Continue বাটনে ক্লিক করলেই নিচের ফরমটি ওপেন হবে।
এ পর্যায়ে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন, নিজের নাম, লিঙ্গ, পেশা, ধর্ম, দেশের নাম, জন্মস্থান(জেলার নাম) এবং জন্মতারিখ (dd-mm-yyyy) দিয়ে ১ম ফরমটি পুরণ করতে হবে।
এই ফর্মটির প্রথমেই যদি আপনি টিক চিহ্ন দেন তাহলে আবেদনকারীর নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে।ব্যক্তিগত তথ্য ইনপুট ফরমের সবচেয়ে নিচের দিকে নাগরিকত্বের সূত্র জানতে চাওয়া হবে। সেখানে “BY BIRTH” অপশনটি নির্বাচন করে দিন।
এই ধাপটি সম্পন্ন হলে “Save and continue” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে চলে যেতে হবে।
চতুর্থঃ ঠিকানা নির্বাচন ও ই-পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন।
উপরের পেইজের “Save and continue” বাটনে ক্লিক করলেই নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
প্রথমে আপনার বর্তমান ঠিকানা সঠিক ভাবে ইনপুট করুন।
ঠিকানা নির্বাচনের জন্য যেমন-জেলার নাম,থানার নাম,গ্রামের নাম,রোড নাম্বার,পোস্ট অফিস,পোস্ট কোড সঠিক ভাবে লিখতে হবে।
প্রত্যেকটি তথ্য যচাই বাছাই করে সঠিক ভাবে দিন। কারন আপনার দেয়া ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে “Present Address same as Permanent” এটি নির্বাচন করে দিলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় একই ঠিকানা বসে যাবে।
আর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে, ঠিকানা আলাদা ভাবে ইনপুট করে দিতে হবে। ঠিকানা দুটি ভিন্ন হলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা থানা ভেরিফিকেশন উভয় ঠিকানায় হতে পারে।
পঞ্চমঃ ID documents।
উপরের ফরমের “Save and continue” বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে নিচের ফরমটি ওপেন হবে।
এখানে আপনার আগের কোন পাসপোর্ট ছিল কিনা এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
আপনার আগে যদি কোন MRP Passport বা ই পাসপোর্ট থেকে থাকে তা হলে সেটি নির্বাচন করে দিতে হবে। আর নতুন পাসপোর্ট আবেদন হলে “No, I don’t have any previous passport” এটি সিলেক্ট করতে হবে।
ID Documents এর সর্বশেষ ঘরে ব্যাক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ইনপুট করতে হবে।
আবেদনকারীর বয়স ২০ বছরের কম হলে NID card অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ব্যাবহার করতে পারবে। তথ্য প্রদান হয়ে গেলে সেইভ বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে জেতে হবে।
ষষ্ঠঃ Parental information।
উপরের পেইজের শেষে “Save and continue” বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে নিচের ফরমটি ওপেন হবে।
Parental information স্থলে আপনাকে পিতা মাতার তথ্য প্রদান করতে বলা হবে।
পিতা-মাতার নাম, তাদের পেশা,জাতীয়তা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হয়।
সপ্তমঃ বৈবাহিক অবস্থা।
উপরের পেইজের নিচে “Save and continue” বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজ ওপেন হবে।
এই পেইজে আবেদনকারী বিবাহিত না অবিবাহিত এই তথ্য জানাতে চাওয়া হবে। এই পর্যায়ে আপনি Marital Status সমূহ পূরণ করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে চলে যান।
অষ্টমঃ Emergency Contact নম্বর।
উপরের পেইজের নিচে “Save and continue” বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজ ওপেন হবে।
এখানে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য একজনের তথ্য দিতে হবে। পরিবারের সদস্য যেমন বাবা,মা কিংবা ভাইয়ের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ক্ষেত্রে Emergency contact নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়।
তা ছাড়া কোন কারণে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলে এই ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার ব্যাবহার করা হবে।
নবমঃ পাসপোর্টের ধরন।
উপরের পেইজের নিচে “Save and continue” বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজ ওপেন হবে। ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম এর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো Passport Option বা পাসপোর্টের ধরন সিলেক্ট করা।
এখান থেকে আপনি আপনার পাসপোর্টের পৃষ্ঠা ও মেয়াদ বাছাই করতে হবে।
অতপর “Save and continue” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে চলে যান।
দশমঃ ডেলিভারির ধরন।
এই ধাপে পাসপোর্টের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। পাসপোর্টের ডেলিভারি ৩ ধরনের হয়ে থাকে। যথঃ
- রেগুলার।
- এক্সপ্রেস।
- সুপার এক্সপ্রেস।
জরুরি বা ইমেরজেন্সি পাসপোর্ট করতে Express Delivery বা Super Express বাছাই করতে পারেন।
Regular Delivery
রেগুলার ডেলিভারিতে পাসপোর্ট হাতে পেতে সাধারণত ১৫ দিন থেকে ২০ দিন সময় লাগে। অন্যান্য বিষয় যেমন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ঠিক থাকলে ১৫ দিনের মধ্যেই ই-পাসপোর্ট হাতে চলে আসে।
Express Delivery
এই পদ্ধতিতে জরুরি কাজে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই Express Delivery তে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। তার সাথে সাথে Pre-Police verification এর প্রয়োজন হয়।
Super Express
এটি অনলাইনে করা যায় না। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি পাওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। তার সাথে সাথে Pre-Police verification এর প্রয়োজন হয়। এতে ২ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট বের হয়ে যায়।
একাদশতমঃ ই-পাসপোর্ট ফি প্রদান।
উপরের পেইজে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সাবমিট দিয়ে ফি প্রদান পেইজে চলে আসুন।
বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ফি ২ ভাবে প্রদান করা যায়। যথা-Online Payment, Offline Payment।
ই পাসপোর্ট অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ফি প্রদান করার জন্য যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
দ্বাদশঃ আবেদন কপি ও অ্যাপ্লিকেশন সামারি প্রিন্ট।
পাসপোর্টের আবেদনটি সঠিকভাবে সাবমিট হয়ে গেলে আপনি আবেদনের কপি এবং Application summery প্রিন্ট করতে হবে।
প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট আফিসে যেতে হবে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে আপনার বায়মেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করবে।
তারপর আপনাকে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেয়া হবে। এই ডেলিভারি স্লিপ পরবর্তী সময়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে কাজে লাগবে।
ত্রয়োদশঃ ই পাসপোর্ট সংগ্রহ।
উপরের সকল কাজ শেষ করার পর এখন শুধু অপেক্ষার পালা। পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়া হবে।
ই পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে আবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে, ডেলিভারি টোকেন দেখিয়ে আপনার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে হবে।