ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম। E-Trade Licence of Bangladesh।

ভূমিকা।

ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এছাড়া ব্যবসায়ীদের প্রথম এবং অবিচ্ছেদ্য একটি প্রমাণপত্র হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স (Trade Licence)। আর বর্তমানে ই-ট্রেড লাইসেন্স আপনি কোন রকমের হয়রানি বা ঝামেলা ছাড়া ঘরে বসেই করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম।

ই-ট্রেড লাইসেন্স কি?

ইংরেজী শব্দ ট্রেড লাইসেন্স(Trade License) অর্থ ব্যবসার অনুমতি পত্র। অর্থাৎ Trade অর্থ ব্যবসা, আর License অর্থ অনুমতিপত্র। সুতারাং ট্রেড লাইসেন্স অর্থ ব্যবসার অনুমতি পত্র।

আর ই-ট্রেড লাইসেন্স(E-Trade License) হলো ইলেক্ট্রনিক ট্রেড লাইসেন্স(Electronic Trade License)। যেটা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ওয়েবভিত্তিক শক্তিশালী ও সুরক্ষিত সফটওয়ারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। সিটি কর্পোরেশন কর বিধান – ১৯৮৩ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সুচনা ঘটে ।

ই-ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

সাধারনত ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে একেক ব্যবসার জন্য একেক ধরনের কাগজ পত্রের প্রয়োজনীতা রয়েছে। যেমন-

সাধারণ ব্যবসাঃ

  • দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের কপি ।
  • আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
  • ব্যবসা যদি যৌথভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে পার্টনার শিপের অঙ্গীকারনামা/শর্তাবলী জমা দিতে হবে।

অংশীদারী ব্যবসাঃ

  • ৩০০ টাকার দলিলে অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিপত্র।
  • ম্যানেজিং পার্টনারের তিন কপি ছবি।
  • ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয় পত্র।

কোম্পানির ক্ষেত্রেঃ

উপরের সব কাগজের সাথে নিচের দুটি কাগজ লাগবে। যথ-

  • কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন।
  • কোম্পানির মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন।

ফ্যাক্টরি/ কারখানার ক্ষেত্রেঃ

  • পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কপি।
  • প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/ কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার বিবরণসহ নকশা/ লোকেশন ম্যাপ।
  • স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র।

এছাড়া সি.এন.জি ষ্টেশন/দাহ্য পদার্থ, ক্লিনিক/প্রাইভেট হাসপাতাল, প্রিন্টিং প্রেস এবং আবাসিক হোটেল, রিক্রুটিং এজেন্সি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ঔষধ ও মাদকদ্রব্য, ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর অথবা ব্যুরো কর্তৃক ছাড়পত্র বা অনুমতি পত্রের প্রয়োজন রয়েছে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম।

বাংলাদেশে বর্তমানে দুইভাবে ট্রেড লাইসেন্স করা যায়। (১) ম্যানুয়াল পদ্ধতি,(২) অনলাইন পদ্ধতি। আমরা আজ আলোচনা করবো ট্রেড লাইসেন্স করার অনলাইন পদ্ধতি বা ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম নিয়ে। নিম্মে কিছু চিত্রের মাধ্যমে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন করার নিয়ম দেখানো হলো।

ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম।

ই-ট্রেড লাইসেন্স করতে আপনাকে Local Government Division,Bangladesh এর https://www.etradelicense.gov.bd/DefaultEng এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

প্রথম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

আপনি আপনার কম্পিউটার থেকে যে কোন ব্রাউজার ওপেন করে এই https://www.etradelicense.gov.bd/DefaultEng ঠিকানায় প্রবেশ করুন। এখানে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার সামনে নিচের পেইজটি চলে আসবে।ই-ট্রেড লাইসেন্স।

২য় ধাপঃ নিবন্ধন করুন।

আপনি ই-ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে প্রথমে নিবন্ধিত হতে হবে। আর নিবন্ধন করার জন্য উপরের পেইজের নিচে নতুন নিবন্ধনের জন্য ক্লিক করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করলে নিচের ফরমটি চলে আসবে।ই-ট্রেড লাইসেন্স।

এই পেইজের তথ্যগুলো যথাযথভাবে পূরণ করে একটি পাসওয়ার্ড দিন। মনে রাখবেন এই পাসওয়ার্ডটি পরবর্তীতে লগইন করতে অবশ্যই প্রয়োজন হবে। অতঃপর নিচের বাম দিকে নিবন্ধন করুন বাটনে ক্লিক করুন। এর পর আপনার সামনে নিচের ফরমটি চলে আসবে।ই-ট্রেড লাইসেন্স।নিবন্ধন করুন বাটনে ক্লিক করার পর আপনার প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে একটি ওটিপি চলে যাবে। বর্তমানে ওটিপি যেতে একটু সময় লাগে। তাই আপনাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে। ওটিপি কোডটি পাওয়া মাত্র সেটি বসিয়ে নিচের দকে অগ্রসর হোন বাটনে ক্লিক করতে হবে। আর অগ্রসর হোন বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।

৩য় ধাপঃ আবেদনপত্র পূরন।

উপরের পেইজের নিচে অগ্রসর হোন বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে নিচের মতো আপনি ই-ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন ফরম পেয়ে যাবেন ।

ই-ট্রেড লাইসেন্স।

উপরের ফরমের প্রথমে বাম পাশের অংশ উপরে থাকে এবং ডান পাশের অংশ নিচে থাকে। প্রথমে থেকে সকল তথ্য পূরণ করে ফরমের একেবারে নিচে সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করুন।

চতুর্থ ধাপঃ আবেদনের নথিপত্র আপলোড।

উপরের সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করলে আপনার সামনে নিচের ফরম চলে আসবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

এই পেইজে আপনি প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন। অতঃপর বাম দিকের নিচে সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করুন। অতঃপর আপনার মোবাইল ও ইমেইলের ঠিকানায় একটি ট্রাকিং নাম্বারসহ ম্যাসেজ যাবে। এর পর আপনার সামনে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

৫ম ধাপঃ ই-ট্রেড লাইসেন্স ফি পরিশোধ।

উপরের ফরমের ডান দিকের পরিশোধ করুন বাটনে ক্লিক করলে নিচের ফরমটি চলে আসবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

এই ফরমের নিচে পরিশোধ করুন বাটনে ক্লিক করলেই নিচের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে চলে আসবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

এই ফরমে আপনি কোন মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। যেমন ভিসা সিলেক্ট করলেই পাশে একটি ইন্টারফেইস দেখা যাবে। সেখানে মোট টাকা, এবং চার্জ দেখা যাবে। অতঃপর আপনি Pay Now বাটনে ক্লিক করলে নিচের ফরমটি চলে আসবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

এই ফরমে কার্ড নং ও কার্ড হোল্ডারের নাম পূরণ করে মাসের নাম এবং বছরের নাম সেলেক্ট করে বাম দিকের নিচে success বাটনে ক্লিক করলে নিচের মতো একটি ম্যাসেজ চলে আসবে।

ই-ট্রেড লাইসেন্স

এই ম্যাসেজে আপনার মোট টাকার পরিমান ও পরিশোধিত রেফারেন্স নং দেখা যাবে। আর এই ম্যাসেজ পাওয়ার মাধ্যমে আপনার ই-ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হবে।

শেষ কথা

বর্তমানে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন ও ই-ট্রেড লাইসেন্স হাতে পাওয়া অনেক সহজ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমস্ত স্থানীয় সরকারের অফিসগুলোতে অনলাইনে আবেদন করার সূযোগ কম রয়েছে। আশা করা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে সবস্থান থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন করা যাবে।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment