পল্লী বিদ্যুৎ আবেদন: পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার পদ্ধতি

নতুন ঘর বাড়ি তৈরি করার পর অনেকেই দৌড়াতে থাকেন বিদ্যুতের মিটারের জন্য। অনেকে জানতে চান কিভাবে আপনার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন বা বিদ্যুতের সংযোগের নতুন মিটারের আবেদন করবেন। ফলে দালাদের খপ্পরে পড়ে যান অনেক মানুষ। নাগরিকদের এই সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নতুন সংযোগের জন্য অনলাইনে আবেদন করার ব্যবস্থা করেছে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য অনলাইন আবেদন করার নিয়ম। চলুন জেনে নেই অনলাইনে কিভাবে করবেন পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন

আবেদন করতে আপনাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু শর্ত রয়েছে সেগুলো পরিপালন করতে হবে। সাথে সাথে যে ডকুমেন্টস লাগবে সেগুলো আগে থেকেই স্ক্যান করে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে একটি ফোল্ডারে সংরক্ষণ করে নিতে হবে। আপনি আনলাইনে আবেদন মোবাইল বা কম্পিউটার যে কোন একটি দিয়ে করতে পারবেন। তবে কম্পিউটার হলে উত্তম। আর সাথে থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদনের শর্ত

অনলাইনে আবেদন করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্ত মানতে হবে। সে জন্য আবেদন শুরু করার পূর্বে  পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওয়েবসাইটের হোম পেইজে প্রকাশ করা শর্তগুলো দেখে নিতে পারেন। নিম্মে শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো।

  • আবেদন করার সময় আবেদনকারীর ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র সংযুক্ত করতে হবে।
  • সংযোগ স্থলের মালিকানা প্রমানের জন্য জমির খারিজের/দলিলের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে।
  • সার্ভিস ড্রপের দুরত্ব (সংযোগস্থল হইতে সার্ভিস পোলের/খম্বার দুরত্ব)১৩০ ফুটের মধ্যে হতে হবে।
  • সঠিক ভাবে মেপে সার্ভিস ড্রপের দুরত্ব প্রদান করতে হবে। পোলের/খম্বার দুরত্ব সঠিক না হলে তারের দৈর্ঘ্য কম/বেশি হতে পারে। ভুল তথ্য দিলে পরবর্তীতে সংযোগ পেতে বিলম্ব হতে পারে।
  • মোট লোড ৮০ কিলোওয়াট এর বেশি হলে এইচটি সংযোগের নিয়মাবলী প্রযোজ্য হবে।
  • অনলাইনে সার্ভে করার পর প্রয়োজনীয় অর্থ (আবেদন ফি, মেম্বারশীপ ফি ও নিরাপত্তা জামানত) জমাদানসহ সকল নির্দেশনা এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
  • আবেদন ফরমের লাল(*) চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলো অবশ্যই পূরন করতে হবে।
  • গ্রাহকের নিজস্ব একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর দিতে হবে

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে কি কি লাগে?

নতুন সংযোগের আবেদন দুই ভাবে করা যায়। যথা অনলাইনে এবং সরাসরি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অপলাইনের মাধ্যমে। তবে যে ভাবেই আবেদন করেননা কেন, নিচের ডকুমেন্টস গুলো অবশ্যই লাগবে।

  • আবেদনকারীর নাম ও সক্রিয় মোবাইল নম্বর।
  • NID বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর  ও স্থায়ী ঠিকানা এবং সংযোগস্থলের ঠিকানা।
  • সংযোগস্থলের জমির মালিকানা তথ্য, দাগ নং ও খতিয়ান নম্বর(প্রমাণ হিসেবে খারিজের/দলিলের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে)।
  • যে ট্রান্সফরমার হতে সংযোগ নিতে চান সেই ট্রান্সফরমারের আওতায় আপনার পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নং ও হিসাব নং সংগ্রহ করুন।
  • নিকটবতী সার্ভিস পোলের দূরত্ব ১৩০ ফুটের কম বেশি হয় কিনা মেপে নিন।
  • লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের লোডের হিসাব অনুযায়ী সংযোগ ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ ব্যবহুত ডিভাইসের সংখ্যা ও কি পরিমান বিদ্যুৎ খরচ হবে তার হিসাব।
  • হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত প্রমান করার জন্য, গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ মেমোর ছবি বা স্ক্যান কপি।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন।

উপরোক্ত শর্তগুলো পরিপালন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো সাথে নিয়ে আপনি আনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সংযোগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে নিম্মের ধাপগুলো অবলম্বন করতে হবে।

আবেদন ফরম পূরণ।

বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন অনলাইনে করতে নিম্মের ধাপগুলো অবলম্বন করতে হবে।

১ম ধাপ- ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে নতুন সংযোগ নিতে অনলাইনে আবেদন করতে মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের এই www.rebpbs.com লিংকে প্রবেশ করুন। উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করার পর আপনার সামনে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন

২য় ধাপ- বিদ্যুৎ অফিস,সংযোগ ও আবেদনকারীর তথ্য পূরণ।

ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর উক্ত পেইজে কয়েকটি অপশন দেখতে পাচ্ছেন। এখান থেকে আবেদনের উপর স্পর্শ করলে ৭টি বিষয় দেখা যাবে। প্রথমে আবেদন করুন লেখার উপর ক্লিক করুন। আপনার সামনে অনলাইনের আবেদন ফরম চলে আসবে।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন

উক্ত ফরমে লাল রংয়ের (*) চিহ্নিত তথ্যগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আপনার এলাকা অনুযায়ী জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও জোনাল অফিস লিস্ট থেকে সিলেক্ট করুন।

একক বাসা-বাড়ির জন্য সংযোগের ট্যারিফ হিসেবে এলটি-এ (আবাসিক) সিলেক্ট করুন। তাছাড়া, বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ির ক্ষেত্রে এমটি-এ (আবাসিক) সিলেক্ট করুন।

তারপর আবেদনকারীর বিবরণ অংশে নাম,পিতার নাম সহ যে কলাম লাল রংয়ের (*) চিহ্ন দেওয়া আছে সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তাছাড়া যে সব কলামে ইংরেজীতে লিখতে বলা হয়েছে সেখানে ইংরেজীতে লিখতে হবে।

যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল, TIN নম্বর, পাসপোর্ট, ফোন নম্বর। এই তথ্যগুলো অবশ্যই ইংরেজীতে লিখতে হবে।

৩য় ধাপ- স্থায়ী ঠিকানা ও প্রস্তাবিত সংযোগ স্থলের বিবরণ।

প্রথমে বিদ্যুৎ অফিসের বিবরনণ, সংযোগস্থলের বিবরণ এবং আবেদনকারীর বিবরণ পূরনের পর একই ফরমের নিচের অংশে রয়েছে স্থায়ী ঠিকানা ও প্রস্তাবিত সংযোগ স্থলের বিবরণ।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন

এখানে স্থায়ী ঠিকানা গ্রাহকের প্রদত্ত আইডি কার্ড অনুযায়ী পূরন করুন। অর্থাৎ আইডি কার্ডে যে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া আছে অবশ্যই সেই ঠিকানা দিতে হবে। ঠিকানা প্রদানের ক্ষেত্রে লাল রংয়ের (*) চিহ্নিত তথ্যগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

প্রস্তাবিত সংযোগস্থলের বিবরণ পূরণের ক্ষেত্রে আপনি যেই স্থানে সংযোগ নিতে চান সেখানের তথ্য দিতে হবে। তবে যেই জায়গার নামজারী/দলিলের কপি সংযুক্ত করবেন সংযোগ স্থলের ঠিকানা সে অনুযায়ী হতে হবে।

চতুর্থ ধাপ- জিওগ্রাফিক, কানেকশন, লোড, চাহিদাকৃত লোডের তথ্য পূরণ।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন

জিওগ্রাফিক তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করতে নিকটবতী সার্ভিস পোল হইতে সংযোগস্থলের দূরত্ব মেপে নিন। কেননা সঠিক মাপ না হলে ক্যাবল বা তার এবং খুটির কারনে সংযোগ পেতে সমস্যা হতে পারে।

একই ট্রান্সফরমারের আওতায় পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নং হিসাব নং, মিটার নম্বর এবং পোল নম্বর (ইংরেজীতে) পূরণ করতে হবে। এর পর আবেদন প্রকৃতি  নির্ধারণ করুন অর্থাৎ স্থায়ী/অস্থায়ী তা নির্ধারণ করুন।

পরের অংশে, ব্যবহার করা হবে এমন লাইট, ফ্যান সহ অন্যান্য ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের সংখ্যা নির্ধারণ করুন। যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে শেষে বাড়ির/প্রতিষ্ঠানের লোকেশন এবং মন্তব্য(বাংলা) লিখুন।

৫ম ধাপ- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড ও সম্মতি প্রদান।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন

এই পর্যায়ে ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং খারিজ আপলোড করুন। অপলোড করার ক্ষেত্রে ফরমে উল্লেখিত সাইজে আবেদনের আগেই আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে একটি ফোল্ডারে সংরক্ষণ করুন। তারপর সহজেই আপলোড করতে পারবেন।

অতঃপর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু শর্ত রয়েছে সেগুলোর সাথে একমত আছেন এই মর্মে পাশে রাখা খালি বক্সে টিক চিহ্ন দিন।

সব শেষে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করুন(ইংরেজীতে) এবং সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এভাবে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

আরো জানতে ভিজিট করুন নিম্মের ঠিকানায়ঃ

আবেদনপত্র প্রিন্ট।

আবেদন ফরম পূরনের যাবতীয় কাজ শেষ করার পর যখন আপনি নিচের সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করবেন তখন আপনাকে একটি ট্যাকিং নম্বর ও পিন নম্বর দিবে। সেটা সাথে সাথে নোট ডাউন করে বা লিখে নিন। কেননা পরবর্তীতে আপনার আবেদনের অবস্থা বা সংশোধন সহ যে কোন তথ্য জানার জন্য এই ট্যাকিং নম্বর ও পিন নম্বর দরকার হবে।

অতঃপর অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফরমটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে নিন।

হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন।

এই ধাপে আপনার বৈদ্যুতিক বাসায় হাউজ ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়েছে  তা নিশ্চিত করতে হবে। হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন ধাপের কাজ করতে প্রয়োজন হবে গ্রাউন্ড রড ক্রয়ের মেমো/রশিদ, ট্যাকিং নম্বর ও পিন নম্বর।

এর পর ওয়েবসাইটের হোম পেইজের মেনুবার থেকে হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন লিংকে ক্লিক করতে হবে। এই লিংকে ক্লিক করলেই আপনার সামনে নিচের ইন্টারফেইজটি ওপেন হবে। ফরমে প্রথমে ট্যাকিং নম্বর ও  পরে পিন নম্বর বসিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ট্যাকিং নম্বর ও  পরে পিন নম্বর বসিয়ে সাবমিট করলে আপনার কাছে হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিতের তথ্য চাইবে। অর্থাৎ হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়েছে সিলেক্ট করুন এবং গ্রাউন্ড রড ক্রয়ের মেমো/রশিদ নম্বরটি ইংরেজীতে লিখুন।

এর পর গ্রাউন্ড রড ক্রয়ের মেমো/রশিদটি আপলোড করুন। তারপর বাড়ির ঠিকানা লিখে ক্যাপচা কোড পূরণ করে সমর্পন করুন বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত এরকম একটি ম্যাসেজ দেখা যাবে।

আরো জানুনঃ

আবেদনের সংযোগ ফি পরিশোধ করুন।

ফি পরিশোধ দুই ভাবে প্রদান করা যায়। যথা-

  1. সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিস বা নির্ধারিত ব্যাংকে পরিশোধ।
  2. রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ।

তবে সংযোগ ফি পরিশোধ সরাসরি অফিসে গিয়ে প্রদান করলেই ভালো হয়।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফি কত।

মিটারের জন্য আবেদন করতে মোট ফি এর পরিমান মাত্র ১১৫/-(একশত পনেরো) টাকা। আপনি সরাসরি অফিসে বা রকেটে যেভাবেই জমা দেননা কেন খরচের পরিমান একই।

আবেদনের অবস্থা অনুসন্ধান।

আপনার অনলাইনে আবেদনের বর্তমান কি অবস্থা তা জানা দরকার। আবেদনটি গ্রহন করা হয়েছে কিনা বা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য ভিজিট করুন এই www.rebpbs.com ঠিকানায়। এর পর আবেদন মেন্যু বার থেকে “আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানুন” অপশনে ক্লিক করুন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন

যে পেইজিটি আপনার সামনে আসবে সেখানে ট্যাকিং নম্বর ও পিন নম্বর দিয়ে সাবমিট করুন। সাবমিট করুন বাটনে ক্লিক করলেই আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।

শেষ কথা।

এত সময় আমরা আলোচনা করলাম পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন বা পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন করার নিয়ম নিয়ে। আশা করি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি সহজেই ঘরে বসে নিজে নিজে পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে পারবেন।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment