পৃথিবীর প্রতিটি দেশ তাদের দেশের সীমানা চিহ্নিত করন, নাগরিকদের ব্যবহুত জমির পরিমান, একটি ভূমির মালিক কে এবং তার সীমানা কতটুকু তা নিরুপনের জন্য ভূমি জরিপের মাধ্যমে নকশা/ম্যাপ প্রস্তুত করে থাকে। তাই ভুমি জরিপ একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেই ভূমি জরিপ বা CS, SA, RS, PS বা BS ইত্যাদি জরিপ কি?
ভূমি জরিপ
ভূমি জরিপ হচ্ছে ভূমির মালিকানার ইতিবৃত্ত তৈরি করা। আইনের ভাষায় ভূমি জরিপের সংজ্ঞা হচ্ছে, The Survey Act, 1875 এর সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতায় জরিপ বিভাগ সরেজমিনে জমি মেপে ভূমির মালিকানার যে বিবরণ এবং নকশা তৈরী করে তাই রেকর্ড বা ভূমি জরিপ হিসেবে পরিচিত।
CS, SA, RS, PS, BS জরিপ কি?
মৌজা ভিত্তিক ভূমির নকশা ও মালিকানা সম্পর্কিত খতিয়ান বা ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত কার্যক্রমকে ভূমি জরিপ বলা হয়। জরিপের মাধ্যমে নতুন মৌজার নকশা ও রেকর্ড তৈরী করা হয় এবং পূর্বে প্রস্তুতকৃত নকশা ও রেকর্ড সংশোধন করে ভূমির শ্রেণীর পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এবং মালিকানার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার সাথে সামাঞ্জস্য রেখে হালকরন করা হয়। এ যাবত কাল পর্যন্ত এদেশে চার বার রেকর্ড জরিপ কার্যক্রম চালান হয়। যথ- CS জরিপ,SA জরিপ, RS জরিপ,BS বা সিটি জরিপ ইত্যাদি।
ভূমি জরিপ বা CS, RS, SA, PS, BS জরিপ।
আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমল থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সময় ভূমি জরিপ বা রেকর্ড হয়েছে। এগুলো একেক সময় একেক নামে পরিচালিত হয়েছে। নামগুলো হচ্ছে;
CS -Cadastral Survey (১৮৮৮সন-১৯৪০সন)
SA-State Acquisition Survey (১৯৫৬সন-১৯৬২সন)
PS-Pakistan Survey
RS-Revisional Survey(১৯৯০ সন-
BS- Bangladesh Survey
জরিপ সম্পর্কে আরো জানুন এই লিংকে।
সিএস জরিপ/রেকর্ড Cadastral Survey
সিএস হলো Cadastral Survey এর সংক্ষিপ্ত রুপ। একে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয়ে থাকে। যাহা ১৮৮৮ সন থেকে শুরু হয়ে ১৯৪০ সনে শেষ হয়। উক্ত জরিপের মাধ্যমে জমির বিস্তারিত ম্যাপ তৈরি করা হয়। ভোগ-দখলকারী উক্ত জমির মালিকের জন্য একটি দাগ নম্বর, জমির পরিমান, খাজনার পরিমান ইত্যাদি সহ একটি বিবরন তৈরি করা হয়। আর এই তৈরিকৃত বিবরনীর একটি নম্বর দেওয়া হয়। যাকে বলা হয় খতিয়ান।
আরো জানুন “অনলাইনে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান” এই লিংকে।
সিএস জরিপ ১৮৮৮ সনে কক্সবাজারের রামু থেকে শুরু হয় এবং ১৯৪০ সনে দিনাজপুরে শেষ হয়। সে সময় সিলেট জেলা ভারতের আসাম প্রদেশের আওতায় হওয়ায় তখন জরিপ হয়নি। তবে জরুরী বিবেচনায় ১৯৩৬ সনের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় সিলেট জেলার Cadastral Survey ১৯৫০ সনে শুরু হয় এবং পরবর্তীতে রাস্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর অধিনে ঐ জরিপ ১৯৬২ সনে শেষ হয়।
SA জরিপ বা State Acquisition Survey (১৯৫৬সন-১৯৬২সন)
১৯৫০ সনে জমিদারী অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬ সনে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ১৯৫৬ সনের ২রা এপ্রিল এই তারিখের আইনের ৩ ধারার আওতাধীন বিজ্ঞপ্তির মূলে সরকার সকল জমিদারী দখল নেওয়ার পর উক্ত আইনের ১৭ ধারা মোতাবেক যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। তাকে এস.এ খতিয়ান বা State Acquisition Survey জরিপ বলা হয়।
মূলত জমিদারী প্রথা বাতিল করে সরকার সমস্ত জমি অধিগ্রহন করে, জমির মালিকদের বা রায়তদের সরকারের নিয়ন্ত্রনে আনার লক্ষে সে সময় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়,যা পরবর্তীতে এস.এ খতিয়ান বলে পরিচিত পায়। এই জরিপ পরিচালিত হয় সাধারনত জমিদার এর প্রদেয় তথ্যের ভিত্তিতে। তাই এই জরিপে অনেক ভুলত্রুটি থেকে যায়।
PS জরিপ বা Pakistan Survey
SA (এস.এ) জরিপকেই পিএস জরিপ বা পাকিস্তান জরিপ/Pakistan Survey বলা হয়। এই জরিপ ১৯৫৬ সন থেকে ১৯৬২ সন পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
RS জরিপ বা Revisional Survey
সি.এস জরিপ সম্পন্ন হওয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। জমির প্রকৃত অবস্থা, মালিক,দখলদার ইত্যাদি বিষয় হালনাগাদ করার জন্য এই জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছিল।এস.এ জরিপের সময় সরেজমিনে তদন্ত বা জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। জমিদারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এস.এ জরিপ বা খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। যার কারনে অনেক ভুলত্রুটি থেকে যায়।
উক্ত ভুলত্রুটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার পূণরায় সরেজমিনে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার সিন্ধান্ত নেয়। আর এই জরিপকেই RS(আর.এস) বা Revisional Surveyবলে। এই জরিপে প্রস্তুতকৃত নকশা বা ম্যাপ এবং খতিয়ান নির্ভুল হিসেবে গ্রহন করা হয়।
BS জরিপ বা Bangladesh Survey
বিএস জরিপ হলো মূলত বাংলাদেশ সার্ভে এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী এই জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। ১৯৯৮-৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বিএস বা Bangladesh Survey বলা হয়।
City Survey বা মহানগর জরিপ
সিটি জরিপের আরেক নাম মহানগর জরিপ। আর.এস জরিপের পর বাংলাদেশ সরকার এর অনুমতিক্রমে এ জরিপ ১৯৯৯ সন থেকে ২০০০ সনের মধ্যে সম্পন্য করা হয়। এ যাবত কালে সর্বশেষ ও আধুনিক জরিপ এটি। এ জরিপের পরচা কম্পিউটার প্রিন্ট এ পকাশিত হয়।
দিয়ারা জরিপ
দিয়ারা জরিপ হলো দরিয়া সম্পর্কিত জরিপ। নদী বা সাগরে জেগে উঠা নতুন ভূখন্ড (চর) জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে সিকস্তি পয়স্তির কারণে ভৌগলিক সীমারেখা ও স্বত্বের পরিবর্তন হলে নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নতুন জরিপ করা হয়। এ সমস্ত জরিপে নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। এটি অতি পুরাতন জরিপ। ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ আরম্ভ হয় ১৮৮৮ সালে,পক্ষান্তরে দিয়ারা জরিপ আরম্ভ হয় ১৮৬২ সালে।
দিয়ারা জরিপে সাধারন জরিপের জন্য প্রযোজ্য সকল স্তর অনুসরন করে পয়স্তি ভূমির(চর) নক্সা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে ৪টি (রাজশাহী,নরসিংদী,চট্রগ্রাম ও বরিশাল) এবং বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক অফিস ও ক্যাম্পের মাধ্যমে সারাদেশের সুনির্দির্ষ্ট কিছু মৌজায় এ জরিপ কাজ পরিচালিত হয়।