মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর।

মুসলমান ধর্মে ফারায়েজ হিসাব একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই ফারায়েজ সম্পর্কে জানেনা। তাই সহজেই ক্যালকুলেটর এপস ব্যবহার করে ফারায়েজ হিসাব বের করার ব্যবস্থা রয়েছে। চলুন আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর নিয়ে।

মুসলিম ফারায়েজ কি?

ফরায়েজ শব্দটি আরবি। এটি আরবী ফারিদাতুন শব্দের বহুবচন। ফারায়েজ হচ্ছে মহাগ্রন্ত আল-কোরআন দ্বারা ফরয করা হয়েছে এমন বিষয়, আবশ্যকীয় বিষয়, অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়। ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায় ফারায়েজ বলা হয়, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনের নীতিকে।

অর্থাৎ যে নিয়ম বা নীতিতে মৃত ব্যাক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকারীদের মাঝে বণ্টন করা হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় ফারায়েজ বলা হয়।

ফারায়েজের গুরুত্বঃ

ইসলামী শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন নিয়মকে ফারায়েজ শাস্ত্র বলা হয়। শরীয়তে ফারায়েজ অবশ্যই একটি স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এ কারণেই ফারায়েজ নিজে শেখা এবং অন্যকে শেখানোর গুরুত্ব আছে৷

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ১৪ শত বছর পূর্বে বলে গিয়েছেন যে, “উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, কেননা সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান”। কিন্তু ইসলামে মিথ্যা এবং অনুমান থেকে সাবধান করা হয়েছে৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা অপবাদের ব্যাপারে অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত৷

ফরায়েজ শাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ

ইসলামী শরীয়তে উত্তারাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতির বা ফারায়েজের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিশ বা  আত্মীয়দের মাঝে কীভাবে বণ্টন করা হবে এবং কার অংশ কতটুকু হবে, সে বিষয়টি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আল-কুরআনে সূরা নিসার ১১ আয়াতের মধ্যে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।

এছাড়াও আমাদের নবী কারীম (সঃ) উক্ত কোরআনের আয়াতের বিস্তারিত ব্যখ্যা দিয়েছেন। নিচে ইসলামী শরীয়তের উত্তরাধিকার সম্পদের বণ্টন পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল:

  • মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদই উত্তরাধিকার সম্পত্তি।
  • উত্তরাধিকার সম্পদ শুধুমাত্র আত্মীয়দের মাঝে বণ্টিত হবে; অনাত্মীয়দের মাঝে নয়।
  • উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের অংশই নির্ধারিত।
  • উত্তরাধিকার সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি হল নিকটাত্মীয়তা; বয়সে বড় হওয়া নয়।
  • উত্তরাধিকার সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা; শরীকানাধীন কোন সম্পদ না রাখা।
  • মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকাবস্থায় তার ব্যক্তিগত ঋণ, অছিয়াত এবং তার দাফন-কাপনের খরচের পর সম্পত্তি বন্টন করা।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর কি?

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর হলো একটি এপস, যার মাধ্যমে যে কেউ উত্তারাধীকারদের সম্পত্তির হিসাব বের করতে পারবে। কেননা এটি বাংলায় তৈরী করা হয়েছে। যার কারনে সহজেই মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির হিসাব এই এপসের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর।

ইসলামী শরিয়াতে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সকল ওয়ারিশদেরকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

জবিউল ফুরুজ :

এদের অংশ কোরআনে পাকে নির্ধারণ করে দেয়া আছে। জবিউল ফুরুজ হলো ১২ জন। তার মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং বাকী ৮ জন মহিলা।। ৪ জন পুরুষ হলো :

  1.  পিতা ।
  2. প্রকৃত পিতামহ বা পিতার পিতা বা দাদা এভাবে যত উপরের দিকে হোক।
  3. বৈপিতৃয় ভাই (ভিন্ন পিতা কিন্তু মাতা এক)।
  4. মৃত ব্যক্তির স্বামী

৮ জন মহিলা হলো :

  1. স্ত্রী।
  2. কন্যা।
  3. পুত্রের কন্যা (যত নিম্নের হোক)
  4. সহদরা ভগ্নি।
  5. বৈমাত্রেয় ভগ্নি (ভিন্ন মাতা, পিতা এক)
  6. বৈপিতৃয় ভগ্নি (ভিন্ন পিতা, মা এক)
  7. মাতা।
  8. প্রকৃত নানী ও প্রকৃত দাদী (এভাবে যত উপরে হোক)

আসাবা বা অবশিষ্ঠভোগী :

জবিউল ফুরুজদের মধ্যে বন্টনের পর আসাবাগণ সম্পত্তি পাবে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির এমন আত্মীয়-স্বজন যাদের কোন অংশ শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট করা হয় নি। তবে আসাবাগন তাদের নির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে কিংবা আসহাবুল ফুরুজ এর অবর্তমানে তাদের সমুদয় সম্পত্তির যারা মালিক হয় তাদেরকে আসাবা বা অবশিষ্টভোগী বলা হয়। আসাবাদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতি হল প্রথমে মৃতের নিকটাত্মীয়রা পাবে। এরপর অবশিষ্ট থাকলে দূরের আত্মীয়রা পাবে।

জবিউল আরহাম :

জবিউল আরহাম হলো অন্যান্য আত্মীয় স্বজন। যদি মৃত ব্যক্তির উপরোক্ত দুই ধরনের কাউকেই পাওয়া না যায় তাহলে জবিউল আরহামদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করতে হবে।

অর্থাৎ মৃতব্যক্তির যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন আসহাবুল ফুরুজ কিংবা আসাবা হিসেবে মিরাস পায় না, বরং এই দুই শ্রেণীর কেউ যদি জীবিত না থাকে তখন যারা মিরাসের সম্পত্তি পায় তাদেরকে জবিউল আরহাম বা উলুল আরহাম বলা হয়।

বিঃ দ্রঃ মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখিত ৩ ধরনের কাউকেই যদি খুঁজে পাওয়া না। যায় তাহলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।

আরো জানুনঃ

মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর এই এপসের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির রেখা যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে বন্টন করতে আপনাকে তিনটি ধাপ অবলম্বন করতে হবে। নিম্মে ধাপগলো চিত্রসহ দেখানো হলো।

১ম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর হিসাব করার জন্য প্রথমেই আপনাকে http://উত্তরাধিকার.বাংলা/ এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। এখানে প্রবেশ করার সাথে সাথেই আপনার সামনে নিচের চিত্রটি চলে আসবে।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর২য় ধাপঃ উধাহরণ হিসেবে ওয়ারিশ সংখ্যা নির্ধারণ।

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর হিসাব এর ২য় ধাপে আপনার মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সংখ্যা নির্ধারণ করুন। যেমন কোন ব্যক্তি একজন স্ত্রী ও দুইজন সহোদর বোন রেখে মারা গ্রছেন। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির পরিমান সর্বমোট ১০ শতাংশ। এই তিনটি অপশন নির্ধারণ করে নিচের ফলাফল বাটনে ক্লিক করতে হবে।

৩য় ধাপঃ ফলাফল দেখা।

উপরের চিত্রের নিচে ফলাফল বাটনে ক্লিক করা মাত্রই আপনার সামনে নিচের ফলাফল সহ বিস্তারিত দেখতে পাবেন।মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটরএখানে দেখা যাচ্ছে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকায় স্ত্রী পেয়েছেন ১/৪ বা চার ভাগের একভাগ। দুই বোন পেয়েছে মোট ২/৩ অংশ। যখন দুই বা ততোধিক বোন থাকে এবং সন্তান,পুত্রের সন্তান, পিতা ও ভাই না থাকে।

সবশেষে নিচে একটি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কার অংশ কতটুকু এবং একেবারে নিচে হিসাবের ধাপসমূহ ব্যখ্যাসহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উপসংহার

মুসলিম ফারায়েজ ক্যালকুলেটর অত্যান্ত সহজ একটি মাধ্যম। যার মাধ্যমে আমরা যে কেউ এই এপসটি ব্যবহার করে উত্তরাধিকারদের মধ্যে কারা কারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশীদার হয় তাহা বের করতে পারবো।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment