রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কেননা এটি ছাড়া গাড়ি চালানোর কোন অনুমতি নেই। তাই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আগেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নেওয়া দরকার। এই জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম এবং এর ফি এর পরিমান। আজকের আর্টিকেলের বিষয় ২০২৪ সনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই ড্রাইভিং লাইসে ফি ২০২৪।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি এর সঠিক পরিমান জেনে সঠিক পদ্ধতিতে ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে হয়। তা নাহলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি নিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে আমাদের অনেকেই অনেক টাকা নষ্ট করে থাকে।
আজ আমরা আলোচনা করবো কোন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি কত। এটা জানা থাকলে বিড়ম্বনায় পড়ার সুযোগ নেই। তো চলুন জেনে নেই কোন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি কত তথা ড্রাইভিং লাইসে ফি ২০২৪।
ড্রাইভিং লাইসে ফি ২০২৪।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২০২৪ জানার আগে আমাদের জানতে হবে বাংলাদেশের BRTA(Bangladesh Road Transport Authority) বা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কোন কোন ক্যাটাগরির ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। কেননা একেক ধরনের লাইসেন্সের জন্য ফি এর পরিমান আলাদা আলাদা।
রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য BRTA(বাংলাদেশ রোড ট্রান্সফোরড অথোরিটি) দুই ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। যথা-
- পেশাদার।
- অপেশাদার।
উপরের দুই ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দুটি ক্যাটাগরিতে ফি জমা দিতে হয়। যেমনঃ
- ক্যাটাগরি-১= শুধু কার।
- ক্যাটাগরি-২= মটর সাইকেল ও কার একসাথে।
আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করলে যে কোন একটি ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে হবে। তাই এই দুই ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স ফির যে কোন এক ক্যাটাগরিতে দুবার বার জমা দিতে হয়। যথাঃ
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের সময়।
- স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সময়।
আরো জানুনঃ
যে সব সেবার(ড্রাইভিং লাইসেন্সের) ফি দিতে হয়।
- লার্নার বা শিক্ষা নবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স(পেশাদার/অপেশাদার) ফি।
- স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ফি।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি।
- লাইসেন্স সংক্রান্ত অন্যান্য ফি।
- ড্রাইভিং লাইসেন্সে মটরযানের শ্রেনি সংযোজন বা পরিবর্তন ফি।
- অন্তর্ভুক্তি বা এন্ডোর্স্মেন্ট ফি।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার/অপেশাদার) ফিঃ
বর্তমানে পেশাদার এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করার সময় নির্ধারিত ফি অনলাইনের মাধ্যমেই জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি হলো-
ক্যাটাগরি-১=৫১৮ টাকা,১৫% ভ্যাট সহ(শুধু মাত্র এক শ্রেনীর মটরযানের জন্য)।
ক্যাটাগরি-২=৭৪৮ টাকা, ১৫% ভ্যাট সহ(দুই শ্রেনীর মোটরযান তথা-মটর সাইকেল ও কার একসাথে)।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্ব শর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। প্রথম লার্নারের জন্য আবেদনের সময় উপরের নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হয়। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদের মধ্যে তিনটি পরীক্ষায়( লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট) অংশ গ্রহন করতে হয়।
তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এরপর পেশাদার ও অপেশাদার এই দুই ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর যে কোন একটির তথা স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া যায়। এই দুই ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার আগে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার সময় দুটি ক্যাটাগরি্র যে কোন একটির ফি প্রাদান করতে হয়।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ফিঃ
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদের মধ্যে তিনটি পরীক্ষায়( লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট) অংশ গ্রহন করে উত্তীর্ণ হতে হয়। উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করা যায়। আর তখন পেশাদার ও অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আলাদা আলাদা হিসাবে ফি জমা দিতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিঃ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ৫ বছরের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ ৫ বছর। এই ৫ বছরের জন্য মোট ফি হলো= ২,৮৩২/-(দুই হাজার আটশত বত্রিশ টাকা)
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিঃ
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ বছরের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ ১০ বছর। এই ১০ বছরের জন্য মোট ফি হলো= ৪,৫৫৭/-(চার হাজার পাঁচশত সাতান্ন টাকা)।
নিম্মে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স চিত্রে সাহায্যে দেখানো হলো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন (ক্যাটাগরি-১ ও ২) ফিঃ
ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেই এটি নবায়ন করতে হয়। এই জন্য পেশাদার ও অপেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফিঃ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ৫ বছরের জন্য হয়ে থাকে। এই জন্য প্রতি বছরে ৩০০/-টাকা হারে (৩০০*৫=১৫০০/-) ১৫০০/- টাকা এবং অন্যান্য ফি সহ ২৪৮০/- টাকা দিতে হবে।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফিঃ
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ বছরের জন্য হয়ে থাকে। এই জন্য প্রতি বছরে ৩০০/-টাকা হারে (৩০০*১০=৩০০০/-) ৩০০০/- টাকা এবং অন্যান্য ফি সহ ৪২১২/- টাকা দিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত অন্যান্য ফিঃ
যদি কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে যায় সেক্ষেত্রে প্রতিলিপি বা ডুপ্লিকেট ফি দিতে হবে। এছাড়া যদি ঠিকানা সংশোধনের প্রয়োজন হয় তাহলেও BRTA এর নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
উপরের চিত্র অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে প্রতিলিপি বা ডুপ্লিকেট ফি দিতে হবে ৯৯২/- টাকা। আর ঠিকানা সংশোধন বা পরিবর্তন ফি ১১০৭/- টাকা।
ড্রাইভিং লাইসেন্সে মোটরযানের শ্রেনি সংযোজন/ধরন পরিবর্তন ফিঃ
আপনি যদি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সে মটরযানের শ্রেনি বা ধরন পরিবর্তন করতে চান তাহলে নির্ধারিত ফি দিয়ে করতে হবে। এই জন্য সংযোজনের নির্ধারিত ফি মোট ১,২,২২/-(এক হাজার দুইশত বাইশ টাকা) প্রদান করতে হবে।
এছাড়া লাইসেন্সে গাড়ির অন্তর্ভুক্তির জন্য মোট ফি এর পরিমান ১,১০৭/-(এক হাজার একশত সাত টাকা) প্রদান করতে হবে।
যে সব ব্যাংকে BRTA এর ফি জমা দেওয়া যায়।
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
- আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
- ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড।
- এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।
- এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড।
- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড।
- মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড।
- এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড।
- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড।
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড।
এক নজরে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২০২৪।
গত ২৮.০২.২০২৩ ইং তারিখে BRTA এক বিজ্ঞপ্তির মাধমে নতুন এই ফি নির্ধারিত করে দেয়। যাহা এখন পর্যন্ত বলবত আছে। আর নিম্মের এই নির্ধারিত ফি তালিকা অনুযায়ী সকল আবেদন কারীকে ফি প্রদান করতে হবে।
শেষ কথা।
আমাদের দেশে বা বিশ্বের যে কোন দেশে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই লাগবে। তাই আমাদের উচিৎ নির্ধারিত ফি দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে নেওয়া। আশা করি উপরের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে আমরা জানতে পারবো ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২০২৪।