চিঠি বা পত্র মানুষের মনের আন্তরিক ভাব প্রকাশ করে থাকে। এক সময় মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো চিঠি বা পত্র। কিন্তু সময়ের বিবর্তন ও প্রযুক্তির প্রভাবে চিঠির প্রচলন নেই বললেই চলে। শুধু মাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কিছু কাজ কর্মের মধ্যে চিঠির প্রচলন রয়েছে। চিঠি লিখতে গিয়ে আমরা অনেকেই ভুল করে থাকি। তাই আজ আমরা আলোচনা করবো চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে। চলুন জেনে নেই চিঠি লেখার নিয়ম।
চিঠি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
পত্র শব্দের আভিধানিক অর্থ স্মারক বা চিহ্ন। কিন্তু ব্যবহারিক দিক থেকে পত্র হলো ব্যক্তিগত খবরাখবর এবং বৈষয়িক কাজ-কর্মের জন্য এক ধরনের লিখিত বিবরণী।
তাই রীতিসিদ্ধ কোন পদ্ধতিতে কোন তথ্য আদান-প্রদান বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করার লিখিত রুপকেই চিঠি বা পত্র বলে।
মানুষের পারস্পরিক আন্তরিক যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম চিঠিপত্র। চিঠির লেখক বা প্রেরক যেমন বিভিন্ন ব্যক্তি,তেমনই চিঠির উদ্দেশ্য, ক্ষেত্র বা বিষয় ও ভিন্ন ভিন্ন। এসব বিবেচনায় চিঠিপত্র প্রধানত দুই প্রকার:
- ব্যক্তিগত চিঠিপত্র
- বৈষয়িক বা ব্যবহারিক অথবা অনুষ্ঠানিক চিঠিপত্র।
ব্যক্তিগত চিঠিপত্র
ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনে মা-বাব, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত জনের কাছে আমরা যেসব পত্র লিখি সেগুলোই ব্যক্তিগত পত্র। এ ধরনের চিঠিতে বিশেষ সমস্যা-জটিলতা বা অভিজ্ঞাতার কথাও লেখা যায়। তাই দুর্বোধ্য শব্দ বা অবান্তর কোন কথা এতে না থাকাই ভালো।
বৈষয়িক বা ব্যবহারিক চিঠিপত্র।
বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পাদনের লক্ষ্যে যে সব চিঠিপত্র লেখা হয় তাকে বৈষয়িক বা ব্যবহারিক চিঠিপত্র অথবা অনুষ্ঠানিক চিঠিপত্র বলে।
এ জাতীয় চিঠিপত্র কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- আবেদন পত্র
- আমন্ত্রন বা নিমন্ত্রন পত্র
- সংবাদ পত্রে প্রকাশের পত্র।
- ব্যবসায়িক পত্র।
- মানপত্র বা অভনন্দন পত্র।
পত্রের কাঠামো বা অংশ
চিঠিপত্রের সাধারণত দুটি অংশ থাকে। যথ-
- পত্রগর্ভ বা ভিতরের অংশ
- শিরোনাম বা বাহিরের অংশ।
পত্রগর্ভ বা ভিতরের অংশ
চিঠিপত্রের মুল অংশকে বলা হয় পত্রগর্ভ। অর্থাৎ যে অংশে পত্রের লেখক তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তাকে মুল অংশ বা পত্রগর্ভ বলে। আর এই পত্রগর্ভে সাধারণত ৫টি অংশ থাকে। যথা-
- মঙ্গলসূচক শব্দঃ যেমন এলাহি ভরসা, ইয়া রব ইত্যাদি।
- লেখকের ঠিকানা ও তারিখ। যেমনঃ ২১১, লালবাগ, ঢাকা। তারিখঃ ১২/১০/২০২৩ ইং
- সম্বোধন ও সম্ভাষণ। যেমনঃ প্রিয় আকাশ, শ্রদ্ধেয় বাবা, স্নেহের নীলা ইত্যাদি।
- মূল বক্তব্য। যেমনঃ সালাম, শুভেচ্ছা প্রদান ও বিষয়ের বিবরন।
- বিদায় সম্ভাষণ ও প্রেরকের স্বাক্ষর। যেমনঃ ইতি-
তোমার বন্ধু,
শুভার্থী, আপনার স্নেহের, আশিক ইত্যাদি।
শিরোনাম বা বাহিরের অংশ।
পত্রের বাহিরের অংশ কে বলা হয় শিরোনাম। অর্থাৎ চিঠির খাম এবং খামের উপরের অংশকে বলা হয় বাহিরের অংশ বা শিরোনাম। এর দুটি অংশ। যথা-
- প্রাপক
- প্রেরক
চিঠি লেখার নিয়ম।
নিম্মে ব্যক্তিগত চিঠি ও বৈষয়িক বা ব্যবহারিক অথবা অনুষ্ঠানিক চিঠিপত্রের নমুনা দেখানো হলো-
ব্যক্তিগত চিঠির নমুনা
বাবার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের পত্রের নমুনা।
এলাহি ভরসা
২১১, লালবাগ, ঢাকা।
তারিখ: ১০/১০/২০২৩ ইং
শ্রদ্ধেয় আব্বা,
আমার সালাম নেবেন। আশা করি বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভালো আছেন।
আগামী ২১শে নভেম্বর থেকে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। পড়াশুনায় খুব ব্যস্ত আছি। পরীক্ষায় প্রথম স্থানটি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই বাড়িতে আসতে পারছিনা। স্কুল থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে যে, নভেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে যাবতীয় ফি পরিশোধ করতে হবে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বাবদ মোট ৪০০০/-(চার হাজার) টাকার দরকার। আব্বা, এ টাকাটা অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে পাঠালে আমার জন্য ভালো হয়।
পরীক্ষার আগে বাড়িতে আসতে পারছিনা বলে মন খারাপ করবেন না। আম্মা আর ভাইয়াকে বলবেন আমার জন্য দোয়া করতে। আপনার নিজের আর আম্মার শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। আজ আর নয়। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি-
আপনার স্নেহের,
শহীদ।
আরো জানুনঃ
বৈষয়িক বা ব্যবহারিক চিঠিপত্রের নমুনা।
এলাকায় পাঠাগার স্থাপনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে একটি আবেদন।
তারিখঃ ১০/১০/২০২৩ ইং
বরাবর,
উপজেলা চেয়ারম্যান
নড়িয়া উপজেলা পরিষদ
শরিয়তপুর।
বিষয়ঃ ময়নামতিতে একটি পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমাদের ময়নামতিতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাশেই রয়েছে উপশী কলেজ। তাছাড়া এখানে রয়েছে বহু পুরনো একটি বড় বাজার। প্রতিদিন বহু ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের সমাগম হয় এখানে। অনেকেই আড্ডা দিয়ে অলস সময় কাটায়। অথচ একটি পাঠাগার থাকলে অনেকেই বইপত্র পড়ে সময় কাটাতে পারত। তাতে তাদের জ্ঞানচর্চা, মানস গঠন এবং সৃজনশীল চেতনার বিকাশ হতো।
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন, ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারণের উপকারের কথা বিবেচনা করে ময়নামতিতে অতিসত্তর একটি পাঠাগার স্থাপনের ব্যবস্থা করে বাধিত করবেন।
নিবেদক।
ময়নামতি এলাকার জনগণের পক্ষে,
সউমিত্র বিশ্বাস।
শেষ কথা।
চিঠিপত্র লেখার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির শিক্ষা-দীক্ষা, ও ব্যক্তির অভিরুচি ফুটে ওঠে। তাই কিছু নিয়ম-নীতি মেনে এবং সুন্দর ও সাবলিল ভাষায় চিঠিপ্ত্র লিখতে হয়। আশা করি উপরের দেখানো নিয়ম অনুসারে লিখতে পারলে আপনার চিঠি লেখা অত্যান্ত সুন্দর হবে।