দরখাস্ত লেখার সঠিক নিয়ম

ছাত্র জীবন থেকে কর্মজীবন এমনকি আবসর জীবনেও দরখাস্ত লেখার গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনে বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন সময়ে আমাদের দরখাস্ত লিখতে হয়। দরখাস্ত যদি সঠিক ও সুন্দরভাবে লিখতে পারা যায় তাহলে কর্তৃপক্ষ আপনার দরখাস্তটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আজকে আমরা জানবো দরখাস্ত লেখার সঠিক নিয়ম

দরখাস্ত লেখার সঠিক নিয়ম

আমাদের জীবনে দরখাস্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছু  শর্ত ও সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি অনুসরণ করে সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে হয়। দরখাস্তের কারণেই কর্তৃপক্ষের নিকট আপনার গুরুত্ব বেড়ে যাবে। তাই কিছু  শর্ত ও সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি অনুসরণ করে দরখাস্ত কর্তৃপক্ষের নিকট ফুটিয়ে তুলতে হয়।

দরখাস্ত কাকে বলে।

ছুটি, প্রশংসাপত্র, বদলি বা কোনো সহযোগিতা চেয়ে বা কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য বা কোনো অসুবিধার কথা জানিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যে অনুষ্ঠানিক পত্র লেখা হয়, তাকে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলে।

দরখাস্তের বৈশিষ্ট।

  • দরখাস্ত বা আবেদনপত্র অবশ্যই শুদ্ধ, সুলিখিত ও সুন্দর হতে হবে।
  • দরখাস্ত হবে সম্পূর্ণ।
  • দরখাস্তে ভাষাগত কোনো ত্রুটি থাকবে না।
  • সুন্দর, নির্ভুল, সুলিখিত দরখাস্ত ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও শিক্ষার পরিচয় বহন করে। আর এ ধরনের দরখাস্তের মাধমে কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষন করে থাকে।
  • দরখাস্তে প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকতে হবে।
  • ঘষামাজা, কাটাকাটি করা যাবেনা।
  • দরখাস্তে প্রয়োজনীয় মার্জিন থাকতে হবে।

দরখাস্তের অংশ।

একটি দরখাস্তে কয়টি অংশ থাকে তা আমাদের জানা একান্ত দরকার।দরখাস্তের অংশগুলো নিম্মরুপ।

  1. তারিখ
  2. প্রাপকের নাম ঠিকানা
  3. বিষয়
  4. সম্বোধন
  5. বডি বা মুল অংশ
  6. বিদায় সম্ভাষণ
  7. প্রেরকের নাম ঠিকানা
  8. সংযুক্তি(যদি থাকে)

দরখাস্ত লেখার সঠিক নিয়ম

তারিখঃ দরখাস্তের উপরে বাম পাশে সঠিক তারিখ লিখতে হবে। তারিখ ভুল হলে দরখাস্ত গ্রহনযোগ্য হবে না। তারিখ এইভাবে লিখা উত্তম যেমন ১২ই অক্টোবর ২০২৩ ইং।

প্রাপকের নাম ঠিকানাঃ দরখাস্ত যার বরাবর লিখবেন তার পদ মর্যাদা ও পূর্ণ ঠিকানা  লিখতে হবে। যেমন- বরাবর প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ইত্যাদি এবং তার ঠিকানা।

বিষয়ঃ আপনি দরখাস্ত কি জন্য লিখছেন তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে। যেমন- “অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন”।

সম্বোধনঃ এখান থেকে দরখাস্তের মুল অংশ শুরু হবে। শুরু করার আগে যার কাছে দরখাস্ত লিখছেন তাকে সম্বোধন সূচক শব্দের মাধ্যমে শুরু করতে হবে। যেমন-জনাব, মহোদয় ইত্যাদি। তবে মহোদয় উত্তম।

বডি বা মুল অংশঃ বডি বা মুল অংশে আপনার আর্জি অত্যন্ত সুন্দর ও সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজনীয় কথা সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।

বিদায় সম্ভাষণঃ এই অংশে আপনার আর্জির মুল বিষয়ের গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে যাকে দরখাস্ত লিখছেন তাকে সম্ভাষণের মাধ্যমে বিদায় নিতে হবে।

প্রেরকের নাম ঠিকানাঃ  বিদায় সম্বাষণের পর বাম পাশে স্বাক্ষর ও প্রেরকের নাম ঠিকানা লিখতে হবে।

সংযুক্তি(যদি থাকে)ঃ দরখাস্তে কোনো  কাগজপত্র সংযুক্ত করার থাকলে দরখাস্তের শেষাংশে সংযুক্তি লিখে কাগজপত্রের নাম উল্লেখ করতে হবে।

দরখাস্ত লেখার কয়েকটি নমুনা।

অগ্রীম ছুটির দরখাস্তের নমুনা

তারিখ: ২৫.০৯.২০২৩ইং।

বরাবর,

প্রধান শিক্ষক।

বাওয়ানী আদর্শ বিদ্যালয়।

ডেমরা-ঢাকা।

বিষয়ঃ- চার দিনের জন্য অগ্রিম ছুটি চেয়ে দরখাস্ত।

জনাব,

সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনির একজন নিয়মিত ছাত্রী। আগামী ০১.১০.২০২৩ইং তারিখ আমার বড় বোনের বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্টানে অংশগ্রহন করার জন্য আগামী ০১-১০-২০২৩ ইং থেকে ০৪-১০-২০২৩ ইং পর্যন্ত চার দিনের ছুটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

অতএব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে উক্ত চার দিনের ছুটি প্রদান করে বাধিত করবেন।

বিনীত নিবেদক,

আপনার একান্ত অনুগত ছাত্রী

শারমিন আক্তার।

অষ্টম শ্রেণি

শাখা- “ক”

রোল – ২২

চাকুরীর জন্য দরখাস্তের নমুনা

তারিখ: ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ইং

বরাবর,

প্রধান কর্মকর্তা, মানব সম্পদ বিভাগ

বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়।

ডেমরা-ঢাকা-১২০৪

বিষয়: ‘শিক্ষক’ পদের জন্য আবেদন।

জনাব,

যথাবিহিত সম্মান পূর্বক নিবেদন এই যে, গত ০৫ জুন, ২০২৩ তারিখের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, ‘শিক্ষক’ পদে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের জন্য একজন প্রার্থী হিসাবে আমি আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ পূর্নাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করছি।

অতএব বিনীত নিবেদন এই যে, জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা পূর্বক উক্ত পদের একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনীত করে আপনার মর্জি হয়।

নিবেদক

আবু নাসের খান

সংযুক্তি:

১। জীবনবৃত্তান্ত

২। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি -০১ কপি।

৩। সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের অনুলিপি।

৪। জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি।

অফিসে ছুটির দরখাস্তের নমুনা

তারিখ: ১২ই অক্টোবর,২০২৩ ইং

বরাবর,

ব্যবস্থাক,

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

লালবাগ শাখা, ঢাকা-১৩১২।

বিষয়: অনুপস্থিতির জন্য ছুটির আবেদন।

জনাব,

সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার শাখার একজন অফিসার। আমি গত ১লা অক্টোবর ২০২৩ ইং থেকে ৫ই  অক্টোবর ২০২৩ ইং পর্যন্ত পারিবারিক সমস্যার কারণে অফিসে উপস্থিত হতে পারিনি।

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত আবেদন, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত ৫ দিনের ছুটি দিয়ে বাধিত করবেন।

বিনীত নিবেদক,

স্বাক্ষর-

মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

অফিসার

ইসলামী ব্যাংক হাংলাদেশ লিঃ 

লালহাগ শাখা, ঢাকা।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment