প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

আমাদের সমাজে প্রতারণা শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সমাজ যে ব্যধিটিতে জর্জরিত তা হলো প্রতারণা। আজ প্রায়ই শোনা যায় মানুষ প্রতারিত হয়েছে। একজন অন্য জনকে ঠকিয়াছে। তাই আমাদের জানা উচিৎ প্রতারণা কি এবং কারো দ্বারা কেউ প্রতারিত হলে প্রতিকার কিভাবে পাবেন। আজকের আলোচনার বিষয় হলো আপনি প্রতারিত হলে কিভাবে প্রতারণা মামলা  করবেন। চলুন জেনে নেই প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

আমরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হলেও বুঝতে সমস্যা হয় কিভাবে প্রতারিত হলাম। যদিও আমরা অনেক পরে বুঝতে পারি যে, আমি প্রতারিত হয়েছি। অনেক সময় প্রতারনার ধরন দেখে বুঝা দায় যে আমি প্রতারিত হচ্ছি। তাই আমাদের জানা উচিৎ প্রতারণা কাকে বলে অথবা কোন কোন উপায়ে প্রতারনা হওয়ার সম্ভনা রয়েছে।

প্রতারণা কাকে বলে?

মামলা করার নিয়ম জানার আগে আমাদের জানতে হবে প্রতারণা কাকে বলে বা প্রতারণা কি?

ছলচাতুরি, প্রবঞ্চনা, শঠতা ইত্যাদি হলো প্রতারণা শব্দের অর্থ। প্রতারককে ইংরেজীতে “Cheat” বা “Cheater” বলা হয়। যে প্রতারণা করে সে সবসময় আইন ভঙ্গ করে অসাধুপায় অবলম্বন করে অন্যায্য কার্যকলাপ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।

অসাধুপায় অবলম্বন,ছলচাতুরি, প্রবঞ্চনা, শঠতার মাধ্যমে কোন কিছু করার সক্ষমতার কারনে কোন রকমের পুরুস্কার গ্রহন করাকে প্রতারণা বলে। প্রতারণা করা হয় আইন ভঙ্গ করে প্রতিযোগিতা মূলক পরিস্থিতিতে অসম সুবিধা পাওয়ার জন্য।

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ৪১৫ ধারার সংজ্ঞা।

Whoever, by deceiving any person, fraudulently or dishonestly induces the person so deceived to deliver any property to any person, or to consent that any person shall retain any property, or intentionally induces the person so deceived to do or omit to do anything which he would not do or omit if he were not so deceived, and which act or omission causes or is likely to cause damage or harm to that person in body, mind, reputation or property, is said to “cheat”.

অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে ছলনা করে বা অসাধুভাবে এক ব্যক্তির দ্বারা অন্য কাউকে কোন সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে অথবা কোন ব্যক্তির কোন সম্পত্তি প্রদান করতে সম্মতি প্রদানে প্ররোচিত করে অথবা ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্য মুলক ভাবে অনুরুপ প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন কোন কাজ করতে বা করা হতে বিরত থাকতে উৎসাহিত করে, যে কাজ সে ব্যক্তি অনুরুপ ভাবে প্রতারিত না হলে করত না বা করা হতে বিরত থাকত না, এবং যে যে কাজ করার বা করা হতে বিরত থাকার ফলে তার দেহের, মনের, খ্যাতির বা সম্পত্তির দিক হতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, তবে অনুরুপ ছলনাকারি প্রতারনা করেছে বলে গণ্য হবে । (বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, 1860, ধারা-৪১৫)

বিস্তারিত জানুনঃ

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, 1860।

একটি উদাহরণঃ

উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে, জনাব “ক” নিজেকে সরকারী কোন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জনাব “খ” কে চাকুরী দেওয়ার প্রলবণ দিয়ে কিছু টাকা নিলো। কিন্তু কোনভাবে জনাব “খ” চাকুরী পেলেন না বা জনাব “ক” কে প্রদান করা টাকাও ফেরত পেলেননা। এখানে প্রতারণার স্বীকার হলেন জনাব “খ” এবং প্রতারণা করলেন জনাব “ক”

প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে আপনি যদি কারো দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে প্রতিকার পাবেন তা আমাদের জানা দরকার। বর্তমান সমাজে প্রতারিত হলে সামাজিকভাবে প্রতিকার পাওয়া খুবই অসম্ভব। তাই প্রতিকার পেতে হলে আশ্রয় নিতে হয় আইনের। করতে হবে মামলা। আর তার আগে আপনাকে বুঝতে হবে কিভাবে প্রতারিত হয়েছেন। বাংলাদেশে প্রতারণার ক্ষেত্রে গুলো সাধারণত নিম্মরুপ-

  • পারিবারিক প্রতারণা।
  • সামাজিক প্রতারণা।
  • রাজনৈতিক প্রতারণা।
  • আর্থিক প্রতারণা।

আমাদের সমাজে সাধারণত উপরোক্ত ক্ষেত্রে মানুষ প্রতারিত হয়ে থাকে। তাই প্রতারিত হলে মামলা কোথায় করবেন তা জানা দরকার।

মামলা কোথায় করবেন।

নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে মামলা করা যায় দুই জায়গায়। যথা-

  1. সংশ্লিষ্ট থানায়।
  2. সংশ্লিষ্ট কোর্টে।

যে কোন ভাবে বা যে কোন কারনে প্রতারণার স্বীকার হলে আপনি উক্ত দুই জায়গায় মামলা করতে পারবেন। আপনি চাকরির নামে কোনো প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় খুব সহজেই নিতে পারেন দায়ী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতারণার মামলা করতে পারেন এবং প্রতারণার পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনা যায়।

দেশে বিদেশে চাকিরীর নামে টাকার লেন দেনের চুক্তি ভঙ্গ করলেও আপনি প্রতারণার অভিযোগে মামলা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চুক্তিপত্র বা প্রতারণার যথাযথ ডকুমেন্টস থাকতে হবে।

বিবাহ ভালোবাসার নাম করে বা তথ্য গোপণ করে প্রতারণার মাধ্যমে সংসার করলে আপনি আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বা মামলা করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে প্রমান করতে হবে যে আপনি প্রতারিত হয়েছেন। নতুবা আপনি উল্টো ফেসে যেতে পারেন প্রতারণা করার অভযোগে।

আরো জানুনঃ

প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

প্রথমতঃ

থানায় এজহার বা FIR(First Information Report) দায়ের করে মামলা করা যায়। থানায় যদি আপনি কোন কারনে মামলা করতে না পারেন বা থানা যদি আপনার মামলাটি গ্রহন না করে তাহলে আপনাকে কোর্টে মামলা করতে হবে। আবার কিছু কিছু ধরনের মামলা সাধারণত থানায় করা যায় না, কোর্টে করতে হয়। যেমন- চেকেরর মামলা। জমি জমার দেওয়ানী মামলা ইতাদি।

দ্বিতীয়তঃ

সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করতে হয় মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বা মহানগর এলাকা হলে মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বাংলাদেশে সকল কোর্টে প্রত্যেক থানার জন্য নির্ধারিত কোর্ট বা আদালত রয়েছে। মামলা হলে সেই থানা সংশ্লিষ্ট নির্ধারিত কোর্টে হবে। জেলার ক্ষেত্রে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা সি.জে.এম কোর্টে এবং মহানগরের ক্ষেত্রে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করতে হয়। মামলাটি প্রথমে নালিশী দরখাস্ত বা Complaint Petition এর মাধ্যমে আদালতের পেসকার বা বেঞ্চ সহকারীর নিকট জমা দেয়া হয়।

আরো জানতে ক্লিক করুন নিম্মের ঠিকানায়ঃ

প্রতারণা মামলার শাস্তি।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪১৭ এবং ৪২০ ধারায় প্রতারণা মামলার শাস্তির বিধান বলা হয়েছে যে-

দণ্ডবিধি ৪১৭ ধারায়ঃ

৪১৫ ধারা অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করে তার শাস্তি বিধান ৪১৭ ধারায় বলা হয়েছে। দন্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি প্রতারনা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি দন্ডবিধির ৪১৭ ধারা অনুযায়ী ১ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত  হতে পারে।

দণ্ডবিধি ৪২০ ধারায়ঃ

এই ৪২০ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি প্রতারনা করে, তাহলে সেই ব্যক্তির ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হত্র পারে।

তাই আমাদের মধ্যে যদি কেউ উপরোক্ত ধরনের প্রতারনার স্বীকার হন, তাহলে প্রতারিত ব্যাক্তি স্থানীয় কোর্টে মামলা করতে পারবেন। সঠিক দলিল দস্তাবেজের দাখিল পূর্বক মামলা দায়ের করলে যেমন ন্যায় বিচার আপাওয়া সম্ভব, তেমনি প্রতারককদের নড়াচড়াও একেবারে কমে যাবে।

সুতারাং প্রতারিত সকল ব্যক্তির উচিৎ সরাসরি প্রতারকের সাথে হাংগামায় না গিয়ে আদালতের কাছে মামলা দ্বায়ের করা। মামলা দ্বায়ের করলেই আপনি সঠিক সমাধান পাবেন।

শেষ কথা।

অনেক মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে প্রতারণা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। আজকাল সমাজে বা দেশের ভিতর প্রতারণার ধরন বা কৌশল অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষ প্রতারিত হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে । এ ধরনের মামলার সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যদি কোন প্রতারণার স্বীকার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিতে পারেন আইনের আশ্রয় বা করতে পারবেন মামলা।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

2 thoughts on “প্রতারণা মামলা করার নিয়ম”

Leave a Comment