বায়না দলিল বাতিল করার উপায়

আমরা জমি কেনার আগে অনেক সময় বায়না করে থাকি। এই বায়না হতে হয় লিখিত রেজিস্ট্রি। বায়না দলিলের ভিত্তিতেই পরবরতীতে মুল দলিল করাহয়। তাই যেমিন জানতে হয় বায়না দলিল করার নিয়ম তেমনি আমাদের জানতে হবে বায়না দলিল বাতিলের করার নিয়ম। যেকোনো ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বায়না দলিল করা যেমন প্রয়োজন তেমনি ক্ষেত্র বিশেষে তাহা বাতিল ও করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি উভয় পক্ষ সম্মতি থেকে তাহলে কোন সমস্যা  থাকার কথা নয়।

কিন্তু যদি এক পক্ষ কোন ছলছাতুরির আশ্রায় নেয় অন্য পক্ষ কি করবে তাহা  অনেকের জানা থাকেনা। তাই যেকোনো ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বায়না দলিল করার পূর্বে আমাদের জানা উচিৎ বায়না দলিল বাতিলের নিয়ম এবং এ সম্পর্কে মামলার নিয়ম সম্পর্কে।

বায়না দলিল কি?

কোন সম্পত্তি ভবিষ্যতে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সম্পত্তির মূল্য বাবদ আংশিক অর্থপ্রাপ্তির প্রদানের মাধ্যমে পক্ষগণের মধ্যে যে লিখিত যে চুক্তি করা হয় তাকে বায়নানামা দলিল বলে। বায়নানাম দলিল হতে হয় লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত। তবে কখনো কখনো রেজিস্ট্রি করা ছাড়াও বায়না দলিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে দলিল রেজিস্ট্রি করাই উত্তম।

বায়না দলিল বাতিল করার উপায়

আমরা জমি, ফ্ল্যাট বা যেকোনো ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বায়না দলিল করা থাকি। কিন্তু সেই দলিল যে অবশ্যই হস্তান্তর দলিলে পরিণত হবে তা কিন্তু নয়। কখনো এক পক্ষের ইচ্ছায় আবার কখনো বা উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি বায়না দলিল বাতিল হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে, এক পক্ষ চাইলেই যে বায়না দলিল বাতিল করে অপরপক্ষের ক্ষতিসাধন করবে তাও কিন্তু নয়। কেননা, অপরপক্ষ চাইলে বায়না দলিল বলবত করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। তাই বায়না দলিল উভয়ের সম্মতিতে হওয়াই উত্তম ।চলুন জেনে নেই, বায়না দলিল বাতিল করার নিয়ম।

বায়না দলিল সাধারনত দুই ভাবে বাতিল করা যায়। যথাঃ

  1. উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে।
  2. আদালতের মাধ্যমে।

 

. উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে।

রেজিস্ট্রিক্রিত বায়না দলিলের মেয়াদকালে উভয় পক্ষ যেকোনো কারণে সম্মত হয়ে দলিল বাতিল করবে। তবে  তাদের পূর্বের সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়েই বায়নানামা বাতিল বা রহিতকরণ দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

অর্থাৎ, যে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল। সেই সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই উক্ত রহিতকরণ দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। উল্লেখ্য, স্থাবর সম্পত্তি যে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন, সেই সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই সকল দলিল দস্তাবেজ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

. আদালতের মাধ্যমে।

যদি উভয় পক্ষের সম্মতি না থাকে তাহলে এক পক্ষ কোন সমস্যার কারনে বায়নানাম দলিল বাতিল করতে চায় আদালতে মামলার মাধ্যমে বাতিল করা যাবে। সেক্ষেত্র বায়নার মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে বায়না দলিল বাতিলের মামলা করা যাবে না।

অর্থাৎ, বায়না দলিলের মেয়াদ যদি ৬ মাস হয়। উক্ত ৬ মাসের মধ্যে বায়না দলিল বাতিলের মামলা করা যাবে না। তবে উভয়ের সম্মতিতে যেকোনো সময়ই উক্ত বায়না দলিল বাতিল করা যাবে। বায়না দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে যে দুইটি জটিল অবস্থায় আদালতের মামলা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, সেগুলো হলো

১.ক্রেতা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিক্রেতার করণীয়

২.বিক্রেতা পল্টি মারলে, ক্রেতা হিসেবে আমাদের করণীয়

১.ক্রেতা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিক্রেতার করণীয়।

বায়নার মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে বায়না দলিল বাতিলের মামলা করা যাবে না। অর্থাৎ,বায়না দলিলের মেয়াদ যদি ৬ মাস হয়, উক্ত ৬ মাসের মধ্যে বায়না দলিল বাতিলের মামলা করা যাবে না।

অতএব,বিক্রেতা হিসেবে আমাদেরকে প্রথমে বায়না দলিলে উল্লেখিত সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় দিতে হবে। উক্ত সময়ের পরেও যদি ক্রেতা কিছু সময় চায় তাহলে মানবতার খাতিরে আমরা সেই সময় দিতে পারি তবে সেটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। তবে সেটি কোন মতেই দীর্ঘ সময় হতে পারবে না। কেননা, বায়না দলিলে উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী চুক্তি তথা বায়না দলিল বাতিলের মামলা করতে হবে।

মামলায় বায়না দলিল বাতিলের পাশাপাশি বায়নার পরিশোধিত টাকাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবী করা যেতে পারে। যদিও দাবী/ গ্রহণ বর্জন সব কিছুই আদালতের এখতিয়ার। তবে, আদালত উক্ত বায়না চুক্তি তথা দলিল বাতিল ঘোষণা করলে তখন আমরা বিক্রেতারা যেখানে খুশী সেখানে আমাদের জমিটি বিক্রি করতে পারবো;আইনানুগ আর কোন বাঁধা থাকছে না।

২.বিক্রেতা পল্টি মারলে, ক্রেতা হিসেবে আমাদের করণীয়

প্রাচীন প্রবাদকে কিছুটা আধুনিক করে এখন বলা হয়, লোভে পাপ, পাপে পলটি। বিক্রেতারা হরহামেশায়ই এমন পলটি মারে। শতাংশ বা কাঠা প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিবে শুনলেই বিক্রেতারা বায়নাপত্র অস্বীকার করে বায়নার ক্রেতাকে ঠকাতে চায়। তখন ক্রেতা হিসেবে আমাদেরকে দলিলে উল্লেখিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

দলিলে কোন সময় উল্লেখ না থাকলে বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশনের দিন থেকে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেও যদি বিক্রেতা অর্থ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দিতে না চায়, তখন ক্রেতা হিসেবে আমাদেরকে বায়না চুক্তি বা বায়না দলিল প্রবলের মামলা করতে হবে।

মামলা করতে হবে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ১২ ধারার অধীনে এবং অবশ্যই বায়না দলিলে উল্লেখিত মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছরের মধ্যে। আদালত সন্তুষ্ট হলে বাকি টাকা পরিশোধের মাধ্যমে উক্ত চুক্তি বা বায়না দলিল কার্যকর করে মূল দলিল সম্পন্ন করাতে পারেন।

আমরা জমি, ফ্ল্যাট বা যেকোনো ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বায়না দলিল করে থাকি। কিন্তু কেনার আগে অবশ্যই বিক্রেতা সব বিষয়ের দিকে খেয়াল করেই সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় করা উচিৎ। তানা হলে আমাদের যে কোন জামেলায় পড়তে হতে পারে। আগে থেকেই আমাদের সকল নিয়ম জানা উচিৎ।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

1 thought on “বায়না দলিল বাতিল করার উপায়”

Leave a Comment