মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমার নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমা বা শুক্রবারের দিনের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যা বর্ণনা রয়েছে। প্রতি শুক্রবার মুসলমানগণ জুমার ্নামাজ উপলক্ষ্যে মসজিদে একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারবন্ধি হয়ে নামাজ আদায় করে। জুমার নামাজের রয়েছে অনেক ফজিলত। তাই এর নিয়ম-কানুন, রাকাত সংখ্যা এবং ফজিলত জানা সকলের উচিৎ। চলুন জেনে নেই জুমার নামাজ কত রাকাত।
জুমার নামাজ কি?
জুমা শব্দটি আররী। এর অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় শুক্রবার বা জুমার দিনে মুসলমানগন একাত্রিত হয়ে জুহরের সময় দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা কে সালাতুল জুমা বা জুমার নামাজ বলা হয়।
সালাতুল জুমা বা জুমার সালাত জোহরের সময় জোহরের চার রাকাত ফরজের পরিবর্তে দু রাকাত আদায় করা হয়। কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যা জায়গায় এই সালাতের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত।
মহাগ্রন্থ আল-কোরয়াআনের ৬২ নং সুরা আল জুমার ৯ ও ১০ং আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুমার সালাতের নির্দেশনা দিয়েছেন।
যেমন- ৯ নং আয়াতে আল্লহ তাআলা বলেছেন-یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
বাংলা অর্থঃ হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা(দুনিয়ার যাবিতীয় কাজ কর্ম) বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।
এর পর ১০ং আয়াতে আল্লহ তাআলা আখেরাতের সম্পদ আদায় করার পর দুনিয়ার স্বাভাবিক রুটি রুজির সন্ধানে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাহালা ইরশাদ করেছেন-فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
বাংলা অর্থঃ অতঃপর যখন সালাত শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান করবে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফল হতে পার।
জুমার দিন এবং এই দিনের আমল বা কাজ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আমলের দিক থেকে যে সব দিনকে আল্লহ তাআলা ফজিলত পূর্ণ করেছেন তার মধ্যে জুমার দিন অন্যতম। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে।
রাসুলে কারীম(সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
জুমার দিনে জুমার নামাজের জন্য ১ম যে ব্যাক্তি গোসল করে মসজিদে যায় সে একটি উট কুরবানীর সওয়াব পাবে। ২য় যে ব্যাক্তি মসজিদে যায় সে একটি গরু কুরবানীর সওয়াব পাবে। ৩য় যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ সে একটি ছাগল কুরবানীর সওয়াব পাবে।
চতুর্থ ব্যাক্তি একটি মুরিগী সদকার সওয়াব পাবে। ৫ম ব্যাক্তি একটি ডিম সদকার সওয়াব পাবে। এর পর ইমাম সাহেব যখন এসে মিম্বারে বসে যায় খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শোনার জন্য বসে যায়। (বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৮৮১)
জুমার নামাজ কত রাকাত।
ইসলামী শরীয়াতে জুমার নামাজ দুই রাকাত। এব্যপারে কারো কোনো মতপার্থক্য নেই। তবে জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত এবং পরে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মুসলিম জুমার সালাত হিসেবে আগে ও পরে মিলিয়ে মোট ১০ রাকাত আদায় করে থাকে। তাই সুন্নত নামজ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ফরজ নামাজ ২(দুই) রাকাত নিয়ে কোন রকমের মতপার্থক্য নেই।
জোহরের সময় জুমার না্মাজ আদায় করা হলেও জুমার নামাজের রয়েছে আলাদা কিছু নিয়ম। যেমন এই নামাজ একা একা পড়া যায় না। জামাআত বদ্ধ হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করতে হয়। নামাজের আগে ইমাম সাহেব খুতবা দিয়ে থাকেন। চুপ করে বসে থেকে খুতবা শুনা ওয়াজীব।
এছাড়াও জুমার দিনে অনেক নফল নামাজ, রোজা রাখার,কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার ও দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত নির্ধারিত আছে। এগুলো জুমার নামাজের অংশ নয়। কিন্তু এই দিনে এই সব নফল ইবাদতের যে সওয়াব রয়েছে সপ্তাহের অন্য দিনে তা নেই।
আরো জানুনঃ
জোহরের নামাজ ও জুমার নামাজের পার্থক্য।
জুমার নামাজ ও জোহরের নামাজের সামান্য পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
- জোহরের নামাজ ৪ রাকাত আর জুমার নামাজ ২ রাকাত।
- জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত ও পরে ৪ রাকাত সুন্নত আর জোহরের নামাজের আগে ৪ রাকাত ও পরে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে।
- জুমার নামাজে ইমামের খুতবা শুনা ওয়াজীব কিন্তু জোহরের নামাজে খুতবা নেই।
- জোহরের নামাজ একা একা পড়া যায় কিন্তু জুমার নামাজ একা একা পড়া যায় না, জামাআতের সহিত আদায় করতে হয়।
- জোহরের নামাজ ছুটে গেলে কাজা করতে হয় কিন্তু জুমার নামাজ ছুটে গেলে জোহরের নামজ ৪ রাকাত আদায় করতে হয়।
শেষ কথা।
যুক্তিসঙ্গত কারন ছাড়া জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই। একমাত্র অসুস্থ বা মুসাফির ব্যক্তির জন্য জুমার নামাজের কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে চলবে। তবে সুস্থ মুসাফির যদি জুমার নামাজ আদায় করতে চায়, তাহলে আদায় করতে পারবে।
অতএব মুমিনের উচিৎ মসজিদে গিয়ে জামাআতের সহিত জুমার সালাত আদায় করা। মহান আল্লহ তাআলা আমাদের সকলকে যথাযথ নিয়ম মেনে আন্তরিকতার সহিত জুমার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন, আমিন।