জমির পর্চা ।জেনে নিন C.S,S.A.R.S,City,B.S/BRSপর্চা চেনার উপায়।

আমাদের মাঝে অনেকেই জমির পর্চা কি বা দেখতে কেমন তা জানেনা। যারা জমিরা পর্চা চেনেনা বা দেখে কোনটি কি পর্চা তা বুঝতে পারেনা তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি। চলুন জেনে নেই জমির পর্চা কি ।C.S,S.A.R.S,CITY,B.S/BRSপর্চা চেনার উপায়।

জমির পর্চা কি?

জরিপ করা জমিজমার বিবরণ সংবলিত সরকারি দলিলকে বলে ‘খতিয়ান’। এই খতিয়ানে থাকে মৌজার দাগ অনুসারে ভূমির মালিকের নাম,বাবার নাম,ঠিকানা,মালিকানার বিবরণ, জমির বিবরণ, মৌজা নম্বর, সীমানা প্রভৃতির হিসাব। আর এই খতিয়ানের অনুলিপিকেই বলা হয় পর্চা

জমির পর্চা বা C.S,S.A.R.S,City,B.S/BRSপর্চা চেনার উপায়।

আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত তিনটি জরিপ পুরাপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সিটি জরিপও প্রায় শেষ। চলমান রয়েছে বি.এস বা বি.আর.এস জরিপ। প্রতিটি জরিপের পর বাংলাদেশ জরিপ বিভাগ একটি অনুলিপি বা খতিয়ান তৈরী করে থাকে। যাকে বলা হয় পর্চা। নিম্মে বিভিন্ন পর্চার পরিচয় তুলে ধরা হল।

ভূমি জরিপ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন এই লিংকে

সি.এস বা C.S পর্চা

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম জরিপের মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় সি.এস খতিয়ান বা C.S পর্চা। এই পর্চার জরিপ পরিচালিত হয় ১৮৮৮ সন থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত। নিম্মে সি.এস পর্চার বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হলো।

  1. এটি দুই পৃষ্ঠার হয়।
  2. প্রথম পৃষ্ঠা দুইটি ভাগে বিভক্ত থাকে।
  3. প্রথম পৃষ্ঠার উপরের অংশে জমিদারদের তথ্য থাকে।
  4. প্রথম পৃষ্টার নিচের অংশে দখলদার বা রায়তদের তথ্য থাকে।
  5. এটি লম্বালম্বি ভাবে লেখা হয়।
  6. ২য় পৃষ্ঠায় জমির দাগ নম্বর ও জমির পরিমান উল্লেখ থাকে।
  7. এটি হাতে লেখাও থাকতে পারে। বর্তমানে প্রিন্ট বা কম্পিউটার কপিও হয়।
  8. এটি দেখতে নিচের চিত্রের মত হয়।

সি.এস পর্চা

বর্তমানে আপনি চাইলে অনলাইনে আবেদন করে এটি ডাক বিভাগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বাসায় পেতে পারেন।

এস,এ বা S.A পর্চা

ব্রিটিশ শাসনের পর অর্থাৎ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। এটি ১৯৫৬ সনে শুরু হয়ে ১৯৬২ ইং সনে শেষ হয়। এ জরিপের পর যে খতিয়ান বা অনুলিপি দেওয়া হয় তাকে এস.এ বা S.A পর্চা  বলে। নিম্মে এস.এ বা S.A পর্চার বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হলো।

  1. এই পর্চাটি হবে এক পৃষ্ঠার।
  2. এই খতিয়ানটি ছবির মত আড়াআড়ি হবে।
  3. রে সার্ভে বা রে ; সা ; নং লেখা থাকবে না।
  4. পর্চার বাম পাশের উপরে সাবেক/ হাল খতিয়ান নং লেখা থাকবে।

এস,এ খতিয়ান

বর্তমানে আপনি চাইলে অনলাইনে আবেদন করে এস.এস পর্চা ডাক বিভাগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বাসায় পেতে পারেন।

আর.এস বা R.S পর্চা

আরএস খতিয়ান বা জরিপের মূল কারণ হচ্ছে এসএ জরিপের ভুল সংশোধন। ১৯৬৬-৮০ সনে এটি সম্পন্ন হয়। এখানে জমির মালিক বা দখলদারদের নিয়ে তথ্য থাকে। নিম্মে আর.এস.বা R.S পর্চার বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হলো।

  1. এই পর্চাটি লম্বলম্বি ভাবে থাকে।
  2.  এখানে সিএস এর মত জমিদারদের তথ্য থাকে না।
  3. এটি দুই পৃষ্ঠার হয়।
  4. রিসার্ভে নং লেখা থাকে।
  5. নিচের চিত্রের মত হয়।

আরএস খতিয়ান

আপনি চাইলে অনলাইনে আবেদন করে আর.এস পর্চা ডাক বিভাগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বাসায় পেতে পারেন।

সিটি জরিপ পর্চা

বাংলাদেশে সিটি জরিপ পরিচালিত হয় ২০০০ ইং সন থেকে। এই পর্চার বৈশিষ্ট হলো।

  1. সিটি জরিপ পর্চার উপরে খতিয়ান নং লেখা থাকে
  2. এই পর্চার উপরে সিটি জরিপ সিল মারা থাকে।
  3. এটি আড়াআড়ি ভাবে এক পাতার পর্চা হয়ে থাকে।
  4. এটি কম্পিউটারে টাইপ করা হয়।
  5. পর্চাটি দেখতে নিচের চিত্রের মতো।

সিটি জরিপ বা খতিয়ান

বি.এস বা বি.আর.এস পর্চা

বাংলাদেশে বিআরএস জরিপটি এখনও চলমান। এই জরিপটি যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে বিআরএস পর্চা প্রদান করা হয়েছে। এই পর্চার বৈশিষ্ট হলো।

  1. এটি আড়াআড়ি ভাবে প্রিন্ট করা হয়।
  2. এর তথ্যগুলো কম্পিউটারে টাইপ করা থাকে।
  3. তবে সিটি জরিপ সিল দেওয়া থাকে না
  4. এটি দেখতে হুবাহু সিটি জরিপ পর্চার মতই।
  5. এই পর্চা দেখতে নিচের চিত্রের মতো।

বিএসআর জরিপ

উপরের সব পর্চা আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে দেখতে বা ডাউনলোড করতে পারবেন এই লিংকে

শেষ কথা

উপরের লেখাটি আপনি যদি সম্পূর্ণ পড়েন এবং প্রতিটি পর্চার দিকে খেয়াল করেন তাহলে সহজেই পর্চা দেখে চিনতে বা বুজতে পারবেন জমির পর্চা কি । C.S,S.A.R.S,City,B.S/BRSপর্চা চেনার উপায়। আশা করা যায় আপনাদের আর পর্চা চিনতে অসুবিধা হবে না।

 

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

1 thought on “জমির পর্চা ।জেনে নিন C.S,S.A.R.S,City,B.S/BRSপর্চা চেনার উপায়।”

Leave a Comment