জমি মাপার পদ্ধতি। জমি পরিমাপের নিয়ম ২০২৩

জমি নিয়ে আমাদের প্রায়ই ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। উক্ত ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন সময় জমিজমা মাপার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই আমাদের জমি মাপার নিয়ম জানা একান্ত জরুরী। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো জমি মাপার পদ্ধতি । জমি পরিমাপের নিয়ম ২০২৩।

জমি মাপার পদ্ধতি

জমি মাপার পদ্ধতি Standard Measurement যা “সরকারি মাপ” বলে পরিচিত। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে জমির পরিমাপ হলো:

ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
কাঠা
বিঘা এবং
একর

উক্ত পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয়ঃ
ইঞ্চি, ফুট ও গজ
১২” ইঞ্চি = ১ ফুট
৩ ফুট= ১ গজ

আরো জানুন-

জমি মাপার পদ্ধতি

জমি বা ভূমি পরিমাপের পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি চালু দেখা যায়। পদ্ধতি যত রকম থাকুক না কেন সুত্র একই।

এই সুত্র ধরে বিভিন্ন এককের সাথে তুলনা করলে সহজেই বিভিন্ন রকম পরিমাপ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আবার বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি পরিমাপের ভিন্নতা থাকলেও সরকারিভাবে দুই প্রকার হিসাব চালু রয়েছে।

শতাংশের হিসাব ও কাঠার হিসাব। এই দুই প্রকার হিসাবে দলিল লেখনসহ ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আরো জানুন-

জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি।

জমি মাপার পদ্ধতি অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে ভূমি বা জমি পরিমাপ করার জন্য দু ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

  1.   চেইন (গান্টার শিকল) পদ্ধতি
  2.   ফিতা দিয়ে পরিমাপ বা ফিতা পদ্ধতি।

চেইন (গান্টার শিকল) পদ্ধতি।

ভূমি পরিমাপ করার বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে গান্টার শিকল পদ্ধতি। ভূমি পরিমাপের সঠিক ও সহজ করার লক্ষে ইংরেজ বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা যে পদ্ধতি আবিস্কার করেন তাকে গান্টার শিকল বলা হয়ে থাকে।

তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিস্কার করেন। তার নাম অনুসারে জমি মাপের এই পদ্ধতিকে নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। বর্তমানে এই পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় জমি পরিমাপের পদ্ধতি হচ্ছে গান্টার শিকল। একর,শতক ও মাইলষ্টোন বসানোর জন্য এই পদ্ধতি অত্যান্ত উপযোগী।

গান্টার শিকলের দৈর্ঘ ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট। এই শিকলটি ১০০ টি ক্ষুদ্রভাগে বিভক্ত থাকে,তাই গান্টার শিকল দিয়ে জমি পরিমাপ করা সুবিধাজনক।

এই শিকলের প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। গান্টার শিকলে ১০ লিংক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পরপর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয়।

চেইন বা শিকলের একক হচ্ছে লিংক। এক শিকল বা এক চেইনে একশত লিংক থাকে। সে অনুসারে হিসাবগুলো নিম্নরুপ:

  • ১ লিংক = ৭.৯ ইঞ্চি।
  • ৫ লিংক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি।
  • ১০ লিংক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চি।
  • ১৫ লিংক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি।
  • ২০ লিংক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি।
  • ২৫ লিংক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি।
  • ৪০ লিংক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি।
  • ৫০ লিংক = ৩৩ ফুট।
  • ১০০ লিংক = ৬৬ইঞ্চি।
  • ১০০ লিংক = ১ গান্টার শিকল বা ১ চেইন।
  • ১০০০ বর্গলিংক = এক শতক।
  • ১,০০,০০০ বর্গলিংক = এক একর।

ফিতা দিয়ে জমি মাপার নিয়ম

আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন,সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।

ফিতা দিয়ে জমি মেপে এর বর্গগজ বা বর্গফুট বের করে জমি পরিমাপ করা হয় বলে একে ফিতা পদ্ধতি বলা হয়। জমি মাপার সুত্রানুাসারে ক্ষেত্রফল বের করে বিভিন্ন হিসাবে ভূমি পরিমাপ করা হয়। বর্গগজ বা বর্গফুট হিসাবে জমি মাপার হিসাব নিম্নরুপ:

  • ১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ = ৪৩৫৬০ বর্গফুট, অর্থাৎ ৪৮৪০ বর্গগজ বা ৪৩৫৬০ বর্গফুট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১ একর।
  • ১ বিঘা = ১৬১৩ বর্গগজ = ১৪৫২০ বর্গফুট।
  • অর্থাৎ ১৬১৩ বর্গগজ বা ১৪৫২০ বর্গফুট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১ বিঘা।
  • ১ কাঠা = ৮০.১৬ বর্গগজ = ৭২১.৪৬ বর্গফুট।
  • ১ ছটাক = ৫.০১ বর্গগজ = ৪৫.০৯ বর্গফুট।
  • ১ বর্গমিটার = ১.১৯৬ বর্গগজ = ১০.৭৬ বর্গফ।

জমি মাপার সাধারন সূত্র

জমি মাপতে একটি সাধারণ ও সর্বজনীন সূত্র ব্যবহার করা হয়। সেটি হচ্ছে এক বা একাধিক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যুক্ত জমির ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ফুট হিসেবে নির্ণয় করে হিসাব করতে হবে। যদি চার পাশের  দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান না হয় তাহলে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গড় নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গড় গুনফলকে ৪৩৬.৫০ দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাহলেই জমির শতাংশের মান পাওয়া যাবে।

জমি মাপার সূত্রের গানিতিক রূপ

ধরন                                                সূত্র

  1. শতাংশ                                         দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গড় গূনফল ভাগ ৪৩৬.৫০
  2. জমির কাঠা                                      জমির ক্ষেত্রফল ভাগ ৭২০

মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জমির পরিমাপ

ভূমি সেবাকে আধুনিকায়নের ফলে বর্তমানে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিমাপ করার ব্যব্যস্থা রয়েছে। উক্ত মোবাইল অ্যাপস ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আয়তাকার, ত্রিভুজাকার, বর্গাকার অর্থাৎ যেকোনো জমির পরিমাপ সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায়।

জমি মাপার ক্যালকুলেটর

উক্ত অ্যাপসটি আপনার মোবাইলের প্লে-স্টোরে গিয়ে “জমি মাপার ক্যালকুলেটর” লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। অ্যাপসটি প্রথমে ডাউনলোড করে সহজেই আপনি আপনার জমির পরিমাপ করতে পারবেন।

শেষ কথা

এতো সময় আমরা জানলাম জমি মাপার তিনটি পদ্ধতি। যথা-চেইন (গান্টার শিকল) পদ্ধতি,ফিতা দিয়ে পরিমাপ বা ফিতা পদ্ধতি এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জমির পরিমাপ করা। আসা করি আপনি উপরের লেখাটি পড়লে জমি মাপার পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। এতে আপনি নিজে নিজে জমি পরিমাপ করতে না পারলেও অন্তত কোন আমিন বা সারভেয়ার আপনার সাথে প্রতারনা করার সুযোগ পাবেনা।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

Leave a Comment