পুরাতন দলিল তল্লাশি করার নিয়ম

আমাদের মধ্যে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে, জমির পুরাতন দলিল তল্লাশি কিভাবে করা যায়? এবং জমির দলিল তল্লাশি কি বা অনেক পুরাতন দলিল তল্লাশি করবো কিভবে? আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো জমির দলিল তল্লাশি কি? অনেক পুরাতন দলিল তল্লাশি করবেন কিভাবে?

জমির দলিল তল্লাশি কি এবং কেনো?

তল্লাশি মানে খোঁজা-খুঁজি করা। যখন একটা দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয় তখন তা অনুমোদন হলে বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর দলিলটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে দুটি সূচি তৈরি করা।

একটি সূচি তৈরি করা হয় দাতা/গ্রহীতার নাম,বাবার নাম দিয়ে। আর একটি সূচি তৈরি করা হয় জমির মৌজার নাম দিয়ে। অফিসিয়ালি এই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য একটি দলিল সম্পাদন হওয়ার পর তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেজিস্ট্রি অফিসে জমা থাকে।

এই নির্দিষ্ট সময়ের পর গ্রহীতাকে দলিল প্রদান করা হয়। এই দলিল যখন কেউ হারিয়ে ফেলে কিংবা কোনো ভাবে নষ্ট হয়ে যায় তখন তার সার্টিফাইড কপির প্রয়োজন হয়। তখন রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে সেই দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করা যায়।

আরো জানুনঃ

পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম।

পুরাতন দলিল তল্লাশি করার নিয়ম

আপনি যদি কোন জমি ক্রয় করতে চান তাহলে জমির মালিকানা যাচাই করতে হতে পারে। এজন্য যার জমি ক্রয় করতে চান তার পুরাতন দলিল তল্লাশি করে দেখা উচিৎ। বাংলাদেশ সরকা্রের ভূমি মন্ত্রনালয় এখনো অনলাইন সিস্টেমের এই সাইটি উন্নতি করেনি। তাই বাংলাদেশের কোন দলিলের তথ্য এইভাবে জানা সম্ভব নয় কিন্তু ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দলিল তল্লাশি করা যায়।

এই ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে। এক যদি মূল দলিল থাকে এবং দুই যদি মূল দলিল না থাকে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তল্লাশি অপরিহার্য কেননা সূচিপত্র তল্লাশি করে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, কাঙ্খিত দলিলটি আপনার প্রয়োজন।

যদি মূল দলিল থাকে  রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হলে মূল দলিলের শেষ পৃষ্ঠার উল্টো দিকে “দলিলটি কত সালের, কত নম্বার বালাম বইয়ের কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠায় নকল করা হয়েছে” তা লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা হয়। দলিলে এই তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সহজেই নকল উঠানো যায়। এই ক্ষেত্রে তল্লাশির প্রয়োজন হয় না।

যদি মূল দলিল না থাকলেঃ  একটি দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদন হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য নিয়ে সূচিবহি তৈরি করা হয়। একটি সূচিবহি তৈরি হয় দলিলে উল্লেখিত জমির দাতা/বিক্রেতা, গ্রহিতা/ক্রেতা বা অন্য কোন পক্ষের নাম দিয়ে, আর একটি সূচি তৈরি হয় জমির মৌজার নাম দিয়ে।

আপনার কাছে দলিলের কোন তথ্য না থাকলে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ সাপেক্ষে রেজিস্ট্রি অফিসে এই সূচিবহি তল্লাশি করে খুঁজে বের করতে পারেন আপনার কাঙ্খিত দলিলটি।

প্রতি দলিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম বা অন্তভুর্ক্ত সম্পত্তির বিবরণ সংক্রান্ত তল্লাশির ক্ষেত্রে ১ বছরের জন্য ২০ টাকা এবং অতিরিক্ত প্রতি বছরের জন্য ১৫ টাকা হলে ফি দিতে হবে।

About Author

AMINUL ISLAM

মোঃ আমিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির পাশাপাশি লেখা লেখির অভ্যাস থেকে ব্লগিং করা। এই ব্লগে বিভন্ন প্রযুক্তি , সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, আইন ও নিয়ম কানুন, এবং ইসলামিক সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি।

8 thoughts on “পুরাতন দলিল তল্লাশি করার নিয়ম”

  1. আমার একটা দলিল খুঁজে পাইতেছিনা। জমি আমার দখলে আছে। দলিল হয়েছে ১০০% নিশ্চিত। আনুমানিক ১৯৬৬ হতে ১৯৭০ সালে দলিল হয়েছে, এখন দলিলটি খুঁজে পেতে চাই তার জন্য কি করতে পারি। খুঁজে পেতে সাহায্য করলে উপকৃত হব।

    Reply
  2. ১) প্রকৃত পক্ষে দলিল তল্লাশীর কাজ রেওর্ড রুমে কারা করে? তাদের সংগে সরাসরি যোগাযোগ কিভাবে করা যায়?
    ২) সরকারী নির্ধারিত ফি দিয়া দিলিল তল্লাশী দেওয়া নিয়ম কি?
    ৩) ফিস পরিশোধ সাপেক্ষে আমি কি নিজে সূচি বই চেক করার সুযোগ পাবো?
    জানাবেন প্লিজ।

    Reply
    • ১.প্রত্যেক রেজিষ্ট্রারী অফিসে নির্ধারিত সংখ্যার দলিল লেখক/তল্লাশি কারক রয়েছে, ঐ অফিসে গেলেই আপনি তাদের সাথে দেখা করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, সেখানে দলালের খপ্পরে না পড়েন। এছাড়া আপনার আশে-পাশের যারা দলিল লেখেন তারাই মূলত দলিল লেখক ও তল্লাশি কারক বটে।
      ২. সরকারী নির্ধারিত ফি সামান্য, কিন্তু বেশী পুরাতন দলিল হলে তল্লাশি কারক গন টাকা একটু বেশি নেয়। এটা আপনি তল্লাশি কারকের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন। সাধারণত একটি দলিল তল্লাশি করতে সরকারী সম্ভব্য ফি ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু দলিল ভেদে আপনার খরচ হবে ২০০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
      ৩. আপনি নিজে তল্লাশি দিতে পারবেন না,যদি আপনার লাইসেন্স না থাকে। দলিল লেখক/তল্লাশি কারকদের লাইসেন্স থাকে।

      Reply

Leave a Comment