মুসলমানদের জীবনে প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। বছর ঘুরেই প্রতি বছর এই দুটি উৎসব আমাদের মাঝে চলে আসে। এর মধ্যে অন্যতম ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর প্রতি বছর একবার আসার কারনে অনেকেই এই নামজের নিয়ম ভুলে যাই। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা ঈদুল ফিতরের নিয়ম নিয়ত ও গুরুত্ব সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদুল ফিতর কি
ঈদ শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। এই দিবসটি প্রতি বছর মুসলমাদের জীবনে ফিরে আসে এবং ধনী-গরীব সকলে মিলে উৎযাপন করে বলেই এর নাম ঈদুল ফিতর।
ঈদুল ফিতরের আর একটি অর্থ খুশি বা আনন্দ, মুসলমানদের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দের দিন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ দু’টি দিবস অত্যন্ত মর্যাদাশীল, আনন্দ ও খুশির দিন। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম উম্মাহর জন্য খুশির সওগাত নিয়ে আসে কাঙ্খিত ঈদ। ঈদ পবিত্র, খুশি ও ক্ষমা এবং সব রকমের ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে বুকে জড়ানোর দিন হলো ঈদ।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পরই প্রথম হিজরিতে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়। হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবী করিম (সা.) মদিনায় এসে জানলেন, মদিনাবাসী বছরের দুটি দিনে আনন্দ-উল্লাস করে থাকে। জিজ্ঞাসা করে তিনি আরও জানলেন, ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই এই দুটি দিনকে তারা উৎসবের দিন হিসেবে পালন করে। রাসুল (সা.) তাঁদের বললেন, আল্লাহ তোমাদের এই দুইটি দিনের বদলে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। দিন দুটি হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
ঈদুল ফিতরের দিনের কাজ
মাহে রমজানের শেষ দিনে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার পর প্রথমা কাজ হচ্ছে তাকবির বলা বা আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা। এটিই ঈদুল ফিতরের প্রথম কাজ। ঈদুল ফিতরের তাকবির হলো اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
বাংলা উচ্চারণঃ ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
আল্লাহ তাআলা কোরআনে তাকবির পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-
وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থঃ ‘আর তোমরা আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’( সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
ঈদের দিন প্রথম কাজ হচ্ছে ফজরের নামাজ আদায় করা।
এরপর অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে-
- মেছওয়াক করা।
- গোসল করা।
- খাবার খাওয়া ( সম্ভব হলে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোষাক বা সম্ভব হলে নতুন পোষাক পরিধান করা।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা(সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত)।
- সদকাতুল ফিতর বাকী থাকলে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই আদায় করা (সম্ভব হলে)।
- তাকবির বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া।
- ঈদের নামজ জামায়াতের সাথে আদায় করা।
- নামাজ শেষ করে খুতবা শুনা(খুতবা শুনা ওয়াজীব)।
- নামাজ শেষ করে তাকবির বলতে বলতে অন্য পথ দিয়ে বাড়ি ফেরা।
- আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া বা কুশল বিনিময় করা।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত
ঈদুল ফিতরের নামজের নিয়ত আরবীতে করার কোন বাধ্য বাধকতা নেই। মনে মনে এই ভাবে নিয়ত করলেই চলবে যে, “আমি কিবলামুখী হয়ে এই ইমামের পিছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সহিত ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজীব নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম“।
আর যারা আরবীতে করতে চায় তারা করতে পারবে। আরবী নিয়ত-
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ঈদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’।’
অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’।
আরো জানুনঃ
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
- প্রথম ইমামের পিছনে মুসল্লিগন কাতারবন্ধি হয়ে দাঁড়াবে।
- তাকবিরে তাহরীমা তথা আল্লাহু আকবার বলে উভয় হাত বাঁধবে।
- এর পর ইমাম সাহেব সানা পড়বেন।
- সুরা ফাতেহার আগে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম সবাই( ইমাম ও মুসল্লিগন) হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন। ৩য় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধবেন।
- সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা মেলাবেন বা কেরাত পড়বেন।
- অন্য নামজের মত রুকু সেজদাহ করে ১ম রাকায়াত শেষ করে ২য় রাকাতের জন্য দাড়াবেন।
- ২য় রাকায়াতে অন্য নামাজের মত সুরা ফাতেহা এবং সুরা মিলিয়ে তেলাওয়াত করবেন।
- রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন, প্রতি বারই হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন। চতুর্থ বার তাকবির দিয়ে সরা সরি রুকুতে চলে যাবেন।
- রুকুতে যাওয়া থেকে আখেরী বৈঠক পর্যন্ত অন্যান্য নামাজের মত সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
- সালাম ফিরিয়ে তাকবির বলবেন- “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ“।
- সব শেষে ইমাম সাহেব খুতবা দিবেন এবং মসল্লিগন চুপ করে খুতবা শুনবেন।
- ইমাম সাহেবের খুতবার মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষ হবে।
শেষ কথা।
ঈদ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা তার ধর্মীয় জীবনের এবং সমাজ জীবনের বহিঃপ্রকাশ, সাম্য মৈত্রীর সন্ধান লাভ করে। বিশ্ব মুসলমানের জীবনে রমযান মাস যেমন আত্মশুদ্ধি ও সাম্যের বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঠিক তেমনি ঈদ বয়ে আনে সাম্য-মৈত্রী-সম্প্রতির সুমহান বার্তা। ঈদ হোক আমাদের জীবনের নিত্যসাথী।